আজকের অলোচ্য বিষয় মুঘল সাম্রাজ্যের শাসক জাহাঙ্গীর এবং শাহজাহান এর রাজত্বকালে উল্লেখযোগ্য দিক সম্পর্কে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলি তুলে ধরা হয়েছে। এখানে সেই সব দিক গুলি তুলে ধরা হয়েছে যেগুলি প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং যে কোন প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষায় এখান থেকে প্রশ্ন আসবেই। নিম্নে জাহাঙ্গীর এবং শাহজাহানের রাজত্বকাল সম্পর্কে আলোচনা করা হল।
Table Of Content (toc)
জাহাঙ্গীর এর শাসনকালে উল্লেখযোগ্য দিক
- জাহাঙ্গীর এর রাজত্বকাল ১৬০৫ সাল থেকে ১৬২৭ সাল পর্যন্ত।
- জাহাঙ্গীর হলেন আকবরের পুত্র।
- জাহাঙ্গীর এর প্রকৃত নাম ছিল সেলিম।
- জাহাঙ্গীর এর প্রিয়তম পত্নীর নাম হল নুরজাহান। নুরজাহান এর পূর্ব নাম ছিল মেহেরুউন্নিসা।
- নুরজাহান কথার অর্থ জগতের আলো।
- আকবরের মৃত্যুর পর তাঁর জৈষ্ঠ্য পুত্র সেলিম নুরউদ্দিন মহম্মদ জাহাঙ্গির বাদশাহ গাজি উপাধি ধারণ করে সিংহাসনে বসেন।
- সিংহাসনে বসে তিনি কতগুলি উদারনৈতিক আইন প্রণয়ন করেন।
- জাহাঙ্গীর সিংহাসনে আরোহন করে বাংলার বারো ভুইয়াদের পরাজিত করেন।
- জাহাঙ্গির সিংহাসনে বসার পর জনকল্যাণের জন্য ১২টি বিজ্ঞপ্তি জারি করেন। তিনি তামগা ও মীর বহরী নামে নদীকর নিষিদ্ধ করেন। শাস্তিদান হিসেব নাক, কান কাটা নিষিদ্ধ করা হয়। মদ্য ও অন্যান্য নেশার দ্রব্য নিষিদ্ধ করা হয়।
- জায়গির প্রথা সংস্কার করা প্রভৃতি ১২টি আইন বা দস্তুর-উল-আমল জারি করা হয়।
- ১৬০৬ সালের ৩০ মে জাহাঙ্গির পঞ্চম শিখগুরু অর্জুন সিংকে মৃত্যুদণ্ড দেন।
- জাহাঙ্গিরের সময় আগ্রাতে ইতিমাদ-উদ-দৌল্লার সমাধি নির্মাণ করেন নুরজাহান।
- জাহাঙ্গির সেকেন্দ্রায় আকবরের সমাধির কাজ সম্পন্ন করেন।
- ইংল্যান্ডের যুবরাজ প্রথম জেমস এর দূত হিসাবে ক্যাপ্টেন হকিন্স এবং এডওয়ার্ড ও স্যার টমার রো জাহাঙ্গিরের দরবারে এসেছিলেন।
আরও জানুন >>
আকবরের রাজত্বকাল সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ দিক।
- জাহাঙ্গিরের দরবারে আকারাজা, আবুল হাসান, মহম্মদ নাদির, বিশেন দাস, কেশর তুলসী, মনোহর, গোবর্ধন, উস্তাদ মনসুর, আবদুল হাসান, মধু, অনন্ত প্রমুখ চিত্রশিল্পী বিরাজ করতেন।
- ১৬০৮ সালে ক্যাপ্টেন হকিন্স ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম জেমসের দূত হিসেবে সুরাটে পৌঁছান এবং ১৬০৯ সালে জাহাঙ্গিরের দরবারে আসেন জাহাঙ্গির তাঁকে ইংলিশ খান উপাধি দেন।
- ১৬১২ সালে পল ক্যানিং, ১৬১৪ সালে উইলিয়াম এডওয়ার্ড ও ১৬১৫ সালে স্যার টমাস রো জাহাঙ্গিরের দরবারে আসেন।
- জাহাঙ্গিরের শাসনকালে চিত্র শিল্পের সর্বাধিক উন্নতি সাধন হয়েছিল।
- জাহাঙ্গিরের সময় গুলশন অ্যালবামের চিত্রকলা সম্পন্ন করা হয়।
- জাহাঙ্গিরের সময় হিন্দু উৎসব রাখি ও দশেরা পালিত হত। তিনি তুলাদান প্রথা বা সম্রাটকে সোনা দিয়ে ওজন করা চালু করেন।
- জগন্নাথ ও জনার্দন ভট্ট ছিলেন জাহাঙ্গিরের দরবারের সংগীতজ্ঞ।
- ১৬২৭ সালে লাহোরের কাছে জাহাঙ্গিরের মৃত্যু হয় এবং লাহোরে তাকে সমাধিস্ত করা হয়।
আরও জানুন >> বাবর ও হুমায়ুন সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
শাহজাহান এর রাজত্বকালে উল্লেখযোগ্য দিক
- শাহজাহান এর শাসনকাল ১৬২৭ থেকে ১৬৫৮ সাল পর্যন্ত।
- জাহাঙ্গিরের তৃতীয় সন্তান হল শাহজাহান।
- শাহজাহানের পূর্ব নাম ছিল খুররম।
- আসফ খাঁ এর কন্যা মমতাজের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।
- জাহাঙ্গিরের মৃত্যুর পর তাঁর তৃতীয় পুত্র খুররম আবুল মুজাফফুর মহম্মদ শাহজাহান বাদশাহ গাজি উপাধি ধারণ করে সিংহাসনে বসেন।
- শাহজাহানের নির্দেশে বাংলার সুবাদার কাশিম আলি হুগলি ও চুট্টোগ্রাম থেকে পর্তুগিজদের উৎখাত করেন।
- শাহজাহানের সময় সমগ্র সাম্রাজের সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি বিরাজ করত। রাজকোষ পরিপূর্ণ ছিল। তাঁর সময় সাম্রাজ্যের আয় পূর্বতন আয়ের মাত্রাকে অতিক্রম করে।
- তাঁর রাজত্বকালকে মুঘল আমলের স্বর্ণযুগ বলা হয়।
- কৃষির উন্নতির জন্য তিনি নানাবিধ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন এবং তার ফলে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
- শাহজাহানের সময় শিল্প, সাহিত্য, সংগীত, চিত্রকলা ও স্থাপত্য শিল্পের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি পরিলক্ষিত হয়।
- তিনি মমতাজের স্মরণে আগ্রায় যমুনা নদীর তীরে তাজমহল নির্মাণ করেন।
- দেওয়ান-ই-আম, দেওয়ান-ই-খাস, লালকেল্লা, মতি মসজিদ, জামা মসজিদ, শিশমহল, খাসমহল, তাজমহল, ময়ূর সিংহাসন তাঁর শিল্পনৈপুণ্য ও সৌন্দর্যপ্রিয়তার সাক্ষ্য বহন করে।
- ময়ূর সিংহাসনের নির্মাণের কারিগর হলেন বেবাদল খাঁ।
- ১৭৩৯ সালে পারস্য সম্রাট নাদির শাহ কোহিনূর হীরা এবং ময়ূর সিংহাসন লুট করে নিয়ে যান।
আরও জানুন >>
চর্যাপদ সম্পর্কে খুঁটিনাটি তথ্য
- তিনি সমগ্র সাম্রাজ্যকে সৌধমালা, উদ্যান, স্নানাগার, নালা, জলাধার, মসজিদ ও স্মৃতিসৌধে সজ্জিত করে তোলেন।
- তাঁর সময়কালে বিখ্যাত হিন্দি ও সংষ্কৃত সভাকবি ছিলেন চিন্তামনি, সুন্দর দাস, আচার্য সরস্বতী ইত্যাদি।
- শাহাজাহান অসুস্থ হওয়ার জন্য তাঁর পুত্রদের মধ্যে সিংহাসন নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়।
- ১৬৫৮ সালে সমুরগড়ের যুদ্ধে ঔরঙ্গজৈব অসুস্থ পিতা শাহাজাহানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। শাহাজাহানের পক্ষে দারা এই যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। কিন্তু ঔরঙ্গজৈব এই যুদ্ধে জয়লাভ করে।
- ঔরঙ্গজৈব পিতা শাহাজাহানকে বন্দী করে সিংহাসনে বসেন।
- ১৬৬৬ সালে বন্দী অবস্থায় শাহাজাহানের মৃত্যু হয়।
________________________________________________
- সাতবাহন বংশ সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন
- কাঞ্চির পল্লব বংশ সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন
- জৈনধর্ম ও জৈন সন্মেলন সম্পর্কে জানুন।
- ভারতে আগত বিদেশি পর্যটক সম্পর্কে জানুন।
- গৌতম বুদ্ধ ও বৌদ্ধ ধর্ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
- ঔরঙ্গজেব এর রাজত্বকালের গুরুত্বপূর্ণ দিক