আজকের অলোচ্য বিষয় মুঘল সাম্রাজ্যের শাসক ঔরঙ্গজেব এর রাজত্বকালে উল্লেখযোগ্য দিক সম্পর্কে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলি তুলে ধরা হয়েছে। এখানে সেই সব দিক গুলি তুলে ধরা হয়েছে যেগুলি প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং যে কোন প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষায় এখান থেকে প্রশ্ন আসবেই। নিম্নে ঔরঙ্গজেব এর রাজত্বকাল সম্পর্কে আলোচনা করা হল।
ঔরঙ্গজেব রাজত্বকালের উল্লেখযোগ্য দিক
- ঔরঙ্গজেব এর শাসনকাল ১৬৫৮ সাল থেকে ১৭০৭ সাল পর্যন্ত।
- ১৬৫৮ সালে ঔরঙ্গজেব পিতা শাহাজাহানকে বন্দী করে সিংহাসনে বসেন।
- ঔরঙ্গজেব ছিলেন শাহাজাহান ও মমতাজের পুত্র।
- ভ্রাতা দারা শিকোহ ও পিতা শাহাজাহানের সসম্মিলিত বাহিনীকে ঔরঙ্গজেব সমুরগড়ের যুদ্ধে(১৬৫৮ সাল) পরাজিত করে দিল্লির সিংহাসনে বসেন।
- ১৬৫৯ সালের জুনে সমস্ত বাধা থেকে মুক্ত হয়ে ঔরঙ্গজেব অভিযেক সম্পন্ন করেন।
- ঔরঙ্গজেব এর উপাধি ছিল আলমগীর, গাজী এবং বাদশাহ।
- ঔরঙ্গজেবকে দরবেশি এবং জিন্দাপির বলা হত।
- ঔরঙ্গজেব তাঁর ভাই সুজা ও মুরাদকে হত্যা করেছিলেন।
- ঔরঙ্গজেব এর আমলে মুঘল সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি চরম শিখরে পৌছায়।
- ঔরঙ্গজেব সম্রাট আকবরের মতোই দৈবস্বত্ব ও জনকল্যাণের আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁর সময়ে প্রদেশের সংখ্যা বেড়ে হয় ২১৷
আরও জানুন >>
আকবরের রাজত্বকাল সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য দিক
- রাজপদে নিয়োগের ক্ষেত্রে তিনি সুন্নি মুসলমানদের প্রাধান্য দিতেন। তিনি ‘মুহতাসিব' নামে এক শ্রেণির কর্মচারী নিযুক্ত করেন তাদের কাজ ছিল সাধারণ মানুষ যাতে কোরান নির্দিষ্ট পথে জীবনধারণ করে তা লক্ষ্য রাখা।
- তিনি ‘পেশকার’ ও ‘ক্রোরি’ প্রভৃতি কিছু পদ সৃষ্টি করেন যা কেবলমাত্র মুসলিমদের জন্য সংরক্ষিত ছিল।
- তিনি হিন্দুদের ওপর ‘জিজিয়া’ ও মুসলিমদের ওপর ‘জাকাৎ’ পুনপ্রবর্তন করেন। চাষিদের সুবিধার জন্য তিনি ৮০ প্রকার কর প্রত্যাহার করেন।
- তিনি ‘খালিসা’ বা রাজকীয় জমি ও রাজস্ব বৃদ্ধির নীতি গ্রহণ করেন।
- ‘দাগ’ ও ‘হুলিয়া’ প্রথা নির্দিষ্টভাবে বিধিবদ্ধ করে এবং মনসবদারির জন্য বাধ্যতামূলক করা হয় । তাঁর সময়ে মোগল গোলন্দাজ বাহিনীর যথেষ্ট উন্নতি হয়।
- ঔরঙ্গজেব পুনঃরায় জিজিয়া কর চালু করেন।
আরও জানুন >> বাবর ও হুমায়ুন এর রাজত্বকাল সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য দিক
- ১৬৮৯ সালে মারাঠা রাজ শম্ভুজিকে তিনি হত্যা করেন।
- ১৬৬৫ সালে রাজা জয়সিংহ মুঘল বাহিনীর হয়ে শিবাজীকে পরাজিত করেন পুরন্দরের সন্ধি সাক্ষর করেন। কিন্তু শিবাজিকে সসম্পুর্ন দমন করা যায়নি।
- ১৬৬৫ সালে ঔরঙ্গজেব নবম শিখ গুরু তেগবাহাদুরকে প্রাণদণ্ড দেন।
- মানুচি নামক ইতালিয় পর্যটক তাঁর সময় ভারতে এসেছিলেন।
- ঔরঙ্গজেব বিজাপুর জয় করেন ১৬৮৬ সালে।
- তিনি গোলকুন্ডা জয় করেন ১৬৮৭ সালে।
- ঔরঙ্গজেব ন্যায় বিচারের পক্ষপাতি ছিলেন। তাঁর কাছে পদস্থ ও ওমরাহ ও গরিব প্রজার কোনো প্রভেদ ছিল না।
- শেখ নিজামি নামে একজন জনৈক পণ্ডিত ব্যক্তির সহযোগিতায় তিনি ফতোয়া-ই-আলমগিরি নামে মুসলিম আইনের এক মূল্যবান সংকলন রচনা করেন।
- সম্রাট ঔরঙ্গজেব ব্যক্তিগত জীবনে একজন নিষ্ঠাবান সুন্নি মুসলমান ছিলেন এবং শরিয়তের বিধান অনুসারে নিজে অতি সংযোগী ও অনাড়ম্বর জীবনযাপন করতেন
- তিনি নিজেকে গাজি বা ধর্মযোদ্ধা বলে অভিহিত করতেন।
- তাঁর অনাড়ম্বর জীবনযাত্রা ও ধর্মের প্রতি নিষ্ঠা দেখে সমকালীন সুন্নি মুসলমানরা তাঁকে জিন্দাপীর বা জীবন্ত সাধু বলে মনে করতেন।
- কোরান ও শরিয়ত-বিরোধী বলে তিনি দরবারে পারসিক ‘নওরোজ বা বসন্তোৎসব, জন্মদিনে সম্রাটকে সোনা ও রূপা দিয়ে ওজন করা, ‘ঝরোখা দর্শন' ও নৃত্য-গীত বন্ধ করে দেন।
- মদ্যপান, গাঁজা-ভাঙের ব্যবহার, জুয়াখেলা পিরের দরগায় বাতি দেওয়া ও মহরমের শোভাযাত্রা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ হয়। নর্তকী ও গণিকাদের তিনি দিল্লি থেকে বহিষ্কৃত করেন।
- ঔরঙ্গজেবের রাজত্বকালে জাঠ, সৎনামি, বুন্দেলা, শিখ, রাজপুত, মারাঠা এবং উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত অঞ্চলের উপজাতিরা বিদ্রোহ ঘোষণা করেন।
- হিন্দুদের হোলি, দেওয়ালি, ধর্মমেলা, যাত্রা, সতীদাহ প্রভৃতি বন্ধ করে দেন। রাজপুত ব্যতীত অপর হিন্দুদের পালকি চড়া, অশ্বারোহণ ও অস্ত্রবহন নিষিদ্ধ হয়।
- হিন্দুদের নতুন মন্দির নির্মাণ নিষিদ্ধ হয় এবং তিনি অসংখ্য মন্দির ধ্বংস করেন। এক বছরের মধ্যে কেরলমাত্র মেবারেই তিনি ২৪০টি মন্দির ধ্বংস করেন। কাশীর বিশ্বনাথ মন্দির, গুজরাটের সোমনাথ মন্দির, মথুরার কেশবদেবের মন্দির, বৃন্দাবনে গোবিন্দ জীউর মন্দির তিনি ধ্বংস করেন। বিভিন্ন বৃত্তি ও উচ্চপদে দান করে তিনি সর্বদাই হিন্দুদের মুসলিম ধর্মগ্রহণে উৎসাহ দিতেন।
- ১৭০৭ সালে ঔরঙ্গজেব আহম্মদনগরে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
________________________________________________
- জৈনধর্ম ও জৈন সন্মেলন সম্পর্কে জানুন।
- মক টেস্ট দিন, প্রস্তুতি যাচাই করুন।
- চর্যাপদ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
- খলজি বংশের ইতিহাস জানুন।