আজকের অলোচ্য বিষয় মুঘল সাম্রাজ্যের শাসক
আকবরের শাসনকাল সম্পর্কে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলি তুলে ধরা হয়েছে।
এখানে সেই সব দিক গুলি তুলে ধরা হয়েছে যেগুলি প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষার জন্য
খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং যে কোন প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষায় এখান থেকে প্রশ্ন
আসবেই। নিম্নে আকবরের রাজত্বকাল সম্পর্কে আলোচনা করা হল।
আকবরের রাজত্বকালে গুরুত্বপূর্ণ দিক
- আকবরের শাসনকাল ১৫৫৬ সাল থেকে ১৬০৫ সাল পর্যন্ত।
- ১৫৪২ সালে সিন্ধুপ্রদেশের অমরকোটে আকবরের জন্ম হয়।
- মাত্র ১৩ বছর ৪ মাস বয়সে সিংহাসনে আরোহন করেন।
- আকবরের গৃহশিক্ষক ছিলেন আব্দুল লতিফ।
- ১৫৫৫ সালে দিল্লির সিংহাসন দখলের পর হুমায়ুন নাবালক আকবরকে পাঞ্জাবের শাসনকর্তা হিসেবে নিযুক্ত করেন-এবং বৈরম খাঁ নামে জনৈক অভিজ্ঞ রাজকর্মচারী তাঁর অভিভাবক নিযুক্ত হন।
- আকবরকে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়।
- হুমায়ুনের মৃত্যু হলে ১৫৫৬ সালে ১৪ ফেব্রুয়ারি বৈরম খাঁ ১৩ বছরের আকবরকে পাঞ্জাবে দিল্লির বাদশা বলে ঘোষণা করেন।
- ১৫৫৬ সালের ৫ নভেম্বর বৈরাম খাঁ ও আকবর এবং হিমুর মধ্যে দ্বিতীয় পানিপথের যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে হিমু পরাজিত হন।
- এই যুদ্ধের ফলে তিন দশক ব্যাপী মোগল আফগান দ্বন্দ্বের পরিসমাপ্তি ঘটে।
- দ্বিতীয় পানিপথের যুদ্ধের ফলে মোগল সাম্রজ্যের প্রকৃত ভিত্তি স্থাপিত হয় এবং ভারতে মোগল সাম্রাজ্যের বিস্তারের পথ উন্মুক্ত হয়।
- তিনি ১৫৬১ খ্রী. মালব জয় করেন।
- আকবর জায়গীরদারি প্রথা প্রবর্তন করেন।
- গন্ডোয়ানার হিন্দু রাজ্য আক্রমণ করে নাবালক রাজা বীরনারায়নকে পরাজিত করেন।
- ১৫৭৬ খ্রি. আকবরের সেনাপতি মানসিংহ ও আসফ খাঁ এবং রানাপ্রতাপের মধ্যে হলদিঘাটের যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে রানাপ্রতাপ পরাজিত হয়।
আরও জানুন >>
গৌতম বুদ্ধ ও বৌদ্ধ ধর্ম
- রানাপ্রতাপের ঘোড়ার নাম ছিল চৈতক।
- আকবর সাম্রাজ্যবাদ নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। আকবর শুধুমাত্র সমরকুশলী বীর হিসাবেই নয় একজন সুশাসক হিসেবে ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে।
- আকবরই ছিলেন ভারতের মোগল শাসনব্যবস্থার প্রবর্তক। ঔদার্য, বিচক্ষণতা, দূরদর্শিতা, প্রজাহিতৈষণা ও ধর্ম নিরপেক্ষতা হল আকবরের শাসনব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
- অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির নির্মাণের জন্য আকবর জমি দিয়েছিলেন চতুর্থ শিখগুরু রামদাসকে।
- আকবর ভূমি রাজস্ব, পথকর, বনকর, জলকর, বাণিজ্য শুল্ক, জরিমানা, নাজরানা প্রভৃতি বিভিন্ন খাতে রাজস্ব আদায় করতেন।
- আকবরের রাজস্বমন্ত্রী ছিলেন টোডরমল। রাজস্ব সংস্কার বিষয়ে তাঁর প্রধান পরামর্শদাতা ছিলেন রাজা টোডরমল।
- ১৫৮২ সালে টোডরমল রাজস্ব সংগ্রহের নতুন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন যা টোডরমল ব্যবস্থা নামে পরিচিত ।
- জাবতি বা দহসালা, গল্লাবকস এবং নাসক এই তিন ধরনের রাজস্ব সংগ্রহ পদ্ধতি প্রচলিত ছিল।
- জমির উৎপাদিকা শক্তি বিবেচনা করে জমিকে চারভাগে ভাগ করা হয়। যথ— পোলাজ, পরৌতি, চাচর এবং বানজার।
- আকবর ১৫৭৯ সালে মনসবদারী প্রথা চালু করেন। মোগল আমলে সামরিক ও বেসামরিক শাসন ব্যবস্থার মূল ভিত্তি ছিল আকবর প্রচলিত মনসবদারি প্রথা। এই প্রথা অনুসারে সাম্রাজ্যের সকল পদস্থ কর্মচারী বেসরকারি কাজকর্মের সঙ্গে সামরিক দায়িত্বপালনে বাধ্য ছিলেন।
- মনসব কথার অর্থ হল পদমর্যাদা। পদমর্যাদা ও দায়িত্ব অনুসারে মনসবদারর ৩৩টি স্তরে বিভক্ত ছিলেন।
- শাসনকার্যে সুবিধার জন্য আকবর তাঁর সাম্রাজ্যকে ১৫টি (মতান্তরে ১২টি) সুবা বা প্রদেশে বিভক্ত করেন। প্রত্যেকটি সুরা কয়েকটি সরকারে, প্রত্যেক সরকার কয়েকটি পরগনায় এবং প্রতিটি পরগনা কয়েকটি গ্রামে বিভক্ত ছিল।
- ১৫৭৫ সালে ফতেপুর সিক্রিতে আকবর ইবাদতখানা নির্মাণ করে ধর্ম ও দর্শনের মূল বিষয়গুলি সম্পর্কে আলোচনার জন্য সবরকম ব্যবস্থা করেন। এখানে হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান, জৈন, পার্সি প্রভৃতি বিভিন্ন ধর্মজ্ঞানীদের আহ্বান জানানো হয়।
- ১৫৮২ সালে ধর্ম চিন্তার বিবর্তনে আকবর শেষ স্তরে উপনীত হয়ে দীন-ই-ইলাহী নামে নতুন একেশ্বরবাদী ধর্মমতের প্রবর্তন করেন। ১৮ জন বিশিষ্ট মুসলিম এবং ১ জন বিশিষ্ট হিন্দু বীরবল এই ধর্মমত গ্রহণ করেন।
- ‘আকবরনামা’ ও ‘আইন-ই-আকবরি' গ্রন্থের রচয়িতা হলেন ঐতিহাসিক আবুল ফজল।
- ‘তবকৎ-ই-আকবরি’ গ্রন্থের প্রণেতা হলেন নিজামউদ্দিন।
- ‘মুস্তাখাব-উল-তারিখ' গ্রন্থের রচয়িতা হলেন বদাউনি।
- কবি ফৈজি, জালালউদ্দিন উরফি, হাস্যরসিক বীরবল, সংগীতজ্ঞ তানসেন ও বজ বাহাদুর, চিত্রকর সৈয়দ আলি ও আবদুস সামাদ, হস্তলিপিশিল্পী মহম্মদ হুসেন ও আবদুর রহিম আকবরের রাজসভা অলংকৃত করতেন।
- আকবরের সভাকবি ও সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন তানসেন। তানসেনের আসল নাম ছিল রামতনু পান্ডে।
- হিন্দি কবি তুলসিদাসের সঙ্গে আকবরের ভাল সম্পর্ক ছিল।
- আকবরের আমলে নির্মিত ফতেপুর সিক্রি, সেলিম চিস্তির সমাধি, দেওয়ান-ই-আম, দেওয়ান-ই-খাস, জামি মসজিদ, বুলন্দ দরওয়াজা, হুমায়ুনের সমাধি, সেকেন্দ্রার সমাধি ভবন মোগল শিল্পের উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।
☞ আরও জানুন >>
বাবর ও হুমায়ুনের শাসনকাল
☞ আরও জানুন >> গুরুত্বপূর্ণ লিপির নাম ও রচয়িতার নাম এবং শাসকের নাম।
- শাসন ব্যবস্থা আরো ভালোভাবে চালানোর জন্য তিনি কয়েকজন মন্ত্রী নিয়োগ করেছিলেন। সেগুলি হল— (১) সম্রাটের পরেই ছিলেন ‘ভকিল বা প্রধানমন্ত্রী। (২) ‘দেওয়ান’ বা অর্থমন্ত্রী রাজস্ব বিভাগের ভারপ্রাপ্ত ছিলেন। (৩) ‘মির বকসি’ ছিলেন সামরিক বিভাগের প্রধান। (৪) ‘সদর-উস-সুদূর' ছিলেন ধর্ম, দাতব্য প্রতিষ্ঠান ও দান বিভাগের অধিকর্তা। (৫) ‘কাজি-উল-কাজাৎ’ বা প্রধান কাজি ছিলেন সম্রাটের অধীনে প্রধান বিচারক। (৬) ‘মির সামান’ ছিলেন সম্রাটের গৃহ-পরিচালনার ভারপ্রাপ্ত কর্মচারী (৭) ‘মুহতসিব’ ছিলেন জনসাধারণের মধ্যে ধর্ম ও নৈতিকতা প্রচারের ভারপ্রাপ্ত। এই মন্ত্রীরা ছাড়াও ‘দারোগা-ই-গুসলখানা’, ‘আরিজ-ই-মুবারক', ‘মির আরাজ’, ‘মুসতাফি’, “মির বাহরি’, ‘মির মঞ্জিল’ ‘মির তোজক’ প্রমুখ প্রধান প্রধান কর্মচারী গুরুত্বপূর্ণ রাজকার্যে নিযুক্ত ছিলেন।
- গুজরাট জয়কে স্বরণীয় করে রাখতে তিনি ফতেপুর সিক্রিতে বুলন্দ দরওজা নির্মাণ করেন।
- আকবর ১৬০৫ খ্রিস্টাব্দে মারা যান এবং সেকেন্দ্রাতে তাঁর দেহ সমাধিস্ত করা হয়।
_________________________________________________
- দাস (slave) বংশ সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন
- গৌড়ের বা বাংলার স্বাধীন রাজবংশ সম্পর্কে জানুন।
- তুঘলক বংশ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
- জৈনধর্ম ও জৈন সন্মেলন সম্পর্কে জানুন।
- জাহাঙ্গীর এবং শাহাজাহান এর শাসনকাল।