কারক ও তাঁর শ্রেণীবিভাগ
ক্রিয়ার সঙ্গে বাক্যে অন্তর্গত নামপদ অর্থাৎ বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের যে সম্পর্ক তাই হল কারক। পানিনির মতে ‘ক্রিয়ান্বয়ী কারকম্’ অর্থাৎ কারক হল ক্রিয়ার সঙ্গে অন্যান্য পদের সম্পর্ক।
বাংলা ভাষায় কারক সম্পর্কে পন্ডিতের মধ্যে একটু মতভেদ রয়েছে সেই মতভেদ একদিকে যেমন কারকের সংখ্যা সম্পর্কে তেমনি কোন কোন কারকের কারকত্ব নিয়েও। সেইসব বিতর্কে আমরা না গিয়ে বরং কারকের শ্রেণীবিভাগ গুলি নিয়ে আলোচনা করব। বাক্যের গঠনগত বৈচিত্র ও বাক্যে ক্রিয়ার সম্পর্কের উপর নির্ভর করে আধুনিক বাংলায় মোট ছয়টি কারক পাওয়া যায় সেগুলি হল- কর্তৃ কারক, করণ কারক, কর্ম কারক, নিমিত্ত কারক, অপাদান কারক এবং অধিকরণ কারক।
Table Of Content (toc)
১। কর্তৃ কারক
বাক্যে যে ক্রিয়া সম্পাদন করে তাকে বলা হয় কর্তা। বাক্যে ক্রিয়া পদের সঙ্গে কর্তার যে সম্পর্ক তাকেই বলা হয় কর্তৃ কারক।
যেমন-শচীন ব্যাট করছে। এই বাক্যে ‘শচীন' নামক ব্যক্তিটি ক্রিয়া সম্পাদন করছে বলে বাক্যের ‘করছে’ ক্রিয়া পদের সঙ্গে শচীনের কর্তৃ সম্পর্ক, তাই শচীন কর্তৃ কারক।
সাধারণত এই কর্তৃ কারক সম্পর্কে বুঝতে গেলে বাক্যের সমাপিকা ক্রিয়াকে কে, কারা, কি দিয়ে প্রশ্ন করতে হয়।
যেমন- ‘নজরুল বিদ্রোহী কবিতাটি লিখেছেন’। এই বাক্যে ‘লিখেছেন' সমাপিকা ক্রিয়াটিকে কে দিয়ে প্রশ্ন করলে পাওয়া যাবে নজরুল।
যেমন:- ‘রোনাল্ডোরা কাপ জিতেছে’।- কারা জিতেছে?
‘নৌকোটা জলে ভাসছে'- কি ভাসছে?
দুটি বাক্যে ক্রিয়াকে কারা ও কি দিয়ে প্রশ্ন করে যে উত্তর পাওয়া গেল তারা প্রত্যেকেই নিজে নিজেও ক্রিয়ার কর্তা বা উক্ত কাজ নিজেরাই করছে তাই ‘রোনাল্ডোরা’ এবং ‘নৌকাটি' কর্তৃ কারক।
বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে, কর্তৃ কারকে শূন্য, কে, রে, এর, র, য়, এ বিভক্তি ব্যবহৃত হয়।
বিভিন্ন প্রকারের কর্তা
ভাব প্রকাশের বিভিন্নতা অনুসারে বাক্যের কর্তাও বিভিন্ন শ্রেণীর হতে পারে-
(ক) প্রযোজক কর্তা
কর্তা নিজে না করে অন্যকে দিয়ে কাজটি করিয়ে নেয়, তাকে প্রযোজক কর্তা বলে।
যেমন- মা শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছেন, শিক্ষক ছাত্রটিকে রচনা লেখাচ্ছেন। এই দুটি বাক্যে মা ও শিক্ষক প্রয়োজক কর্তা।
(খ) প্রযোজ্য কর্তা
প্রযোজক কর্তা যাকে দিয়ে কাজটি করান তাকে প্রযোজ্য কর্তা বলে। উপরের উদাহরণে শিশু ও ছাত্রটি প্রযোজ্য কর্তা কারণ এদের দিয়ে মূল কাজটি হচ্ছে বা করানো হচ্ছে।
(গ) সমধাতুজ কর্তা
বাক্যের ক্রিয়া যে ধাতু থেকে উৎপন্ন সেই ধাতু থেকে উৎপন্ন কোনো বিশেষ্য পদ যদি ওই ক্রিয়ার কর্তা হয় তাহলে তাকে বলা হয় সমধাতুজ কর্তা। যেমন - মেলা মানুষকে মিলিয়ে দেয়, নেপালে রোজ ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটছে। এখানে মেলা ও মিলিয়ে উভয়ই মিল ধাতু থেকে সৃষ্টি। সেভাবেই ঘটনা ও ঘুটছে উভয়ই ঘট্ ধাতু থেকে সৃষ্টি। তাই মেলা ও ঘটনা এখানে সমধাতুজ কর্তা।
(ঘ) নিরপেক্ষ কর্তা
একই বাক্যে সমাপিকা ও অসমাপিকা ক্রিয়ার আলাদা আলাদা কর্তা হলে ওই ক্রিয়ার কর্তাকে নিরপেক্ষ কর্তা বলে। যেমন - অরুণ পাশ করলে মিষ্টি খাওয়াবে, সূর্য উঠলে অন্ধকার দূর হবে, প্রথম বাক্যে পাস করলে অসমাপিকা ক্রিয়া কর্তা অরুণ হলো নিরপেক্ষ কর্তা। আবার দ্বিতীয় বাক্যে উঠলো অসমাপিকা ক্রিয়ার কর্তা সূর্য হল নিরপেক্ষ কর্তা।
(ঙ) ব্যতিহার কর্তা
বাক্যে দুই বা তথোধিক কর্তা একে অপরের বিরোধিতা করে তখন সেই ক্রিয়ার কর্তাকে বলে ব্যতিহার কর্তা। যেমন - রাজায় রাজায় যুদ্ধ হচ্ছে, সাপে নেউলে লড়াই লেগেছে। এই দুটি বাক্যে রাজায় রাজায় এবং সাপে নেউলে হল ব্যতিহার কর্তা।
(চ) সহযোগী কর্তা
কোন বাক্যে দুটি কর্তার মধ্যে সহযোগিতার ভাব প্রকাশ পেলে তাকে সহযোগী কর্তা বলে। যেমন- বাবা-মা একসঙ্গে বাজার করছেন। এখানে বাবা-মা সহযোগী কর্তা।
(ছ) সাধন কর্তা
বাক্যে যখন যন্ত্র উপকরণকে কর্তা হিসেবে ব্যবহার করা হয় তখন তাকে সাধন কর্তা বলে। যেমন - ঢেঁকি স্বর্গে গিয়েও ধান ভাঙ্গে। এখানে ঢেঁকি হলো সাধন কর্তা
(জ) অলংকারী কর্তা
কোন সচেতন বস্তুতে চেতনা অরোপ করলে সেটি অনেক সময় ক্রিয়া সম্পাদন করে বাক্যের কর্তা হয়ে উঠতে পারে, আর তখন তাকে অলংকারী কর্তা বলে। যেমন - আকাশ আমায় শিক্ষা দিল মুক্ত বেনী পিঠের পাড়ে লুটে। এই বাক্যটি আকাশ এবং মুক্ত বেনী অচেতন বস্তু তাদের কল্পনায় সচেতন ধরে নেওয়ায় তারা দিল ও লুটে ক্রিয়ার চিহ্নিত হয়েছে। তাই আকাশ ও মুক্ত বেণী অলংকারী কর্তা।
২। কর্ম কারক
বাক্যের কর্তা যা করে অর্থাৎ যাকে আশ্রয় করে কর্তা কোন কাজ বা ক্রিয়া সম্পাদন করে তাকে কর্ম কারক বলে। যেমন - মাধুরী গান গাইছে। এই বাক্যের মাধুরী কর্তা। আমরা জানি কর্তা যা করে তাই কর্ম। মাধুরী যা করে অর্থাৎ গান হল কর্ম।
সাধারণত কি বা কাকে বা কাদের দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় সেটাই কর্ম কারক।
- >>আরও পড়ুন >> বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস : চর্যাপদ
বিভিন্ন প্রকারের কর্ম
(ক) মুখ্য কর্ম ও গৌণ কর্ম
কোন বাক্যের দুটি কর্ম থাকলে অপ্রাণীবাচক কর্মটিকে মুখ্য কর্ম ও প্রাণী বাচক কর্মটিকে গৌন কর্ম বলা হয়।
যেমন - স্যার মনোজকে ব্যাকরণ পড়ান। মা শিশুকে ভাত খাওয়াচ্ছেন। উদাহরণ দুটিতে ব্যাকরণ ও ভাত হলো মুখ্য কর্ম আর মনোজ ও শিশুকে হচ্ছে গৌনকর্ম। মুখ্য কর্ম চেনার উপায় ক্রিয়াকে কি দিয়ে প্রশ্ন করা। গৌণ কর্ম চেনার উপায় ক্রিয়াকে কাকে বা কাদের দিয়ে প্রশ্ন করা।
(খ) উদ্দেশ্য কর্ম ও বিধেয় কর্ম
কিছু ক্রিয়ার কর্মের পরিপূরক হিসেবে অন্য পদ ব্যবহার করা হয় এই পরিপূরক পদটিকে বলা হয় বিধেয় কর্ম এবং প্রথম কর্মটিকে বলা হয় উদ্দেশ্য কর্ম।
যেমন - আমি তাকে গুরু বলে স্বীকার করেছি। নিবারণ দড়িকে সাপ বলে মনে করল। উদাহরণ দুটিতে তাকে ও দড়িকে হল উদ্দেশ্য কর্ম এবং গুরু ও সাপ হলো বিধেয় কর্ম।
(গ) সমধাতুজ কর্ম
বাক্যের ক্রিয়া যে ধাতু থেকে নিষ্পন্ন সেই ধাতু থেকেই বাক্যের কর্মপদটি সৃষ্টি হলে তাকে সমধাতুজ কর্তা বলে।
যেমন - একবার চোখের দেখা দেখো। কত গানও গাওয়া হল। এখানে সমাপিকা ক্রিয়া দেখো এবং কর্মপদ দেখা একই ধাতু দেখ থেকে উৎপন্ন তাই দেখা কর্মটি হল সমাধতুজ কর্ম। একইভাবে দ্বিতীয় উদাহরণে গান হলো সমধাতুজ কর্ম।
(ঘ) উহ্য কর্ম
বাক্যের সকর্ম ক্রিয়ার কর্ম উহ্য থাকলে সেই কর্মকে উহ্য কর্ম বলে।
যেমন - আমি লিখছি। তিনি তখন খেতে বসেনি। এই দুটি উদাহরণে লিখছি ও খেতে বসেনি ক্রিয়ার কর্ম (বিষয়বস্তু ও খাদ্যবস্তু) উহ্য।
(ঙ) কর্মে বিপসা
কোন বাক্যে কর্মপদ্ধতির পুনরাবৃত্তি ঘটলে কর্মে বিপসা ঘটে।
যেমন - বাড়ি বাড়ি যাও। জনে জনে ডেকে বলছি।
(চ) বাক্যাংশ কর্ম
সমাপিকা ক্রিয়া বিহীন পদগুচ্ছ বা বাক্যাংশ যদি প্রধান ক্রিয়ার কর্ম হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তবে সেই কর্মকে বলা হয় বাকাংশ কর্ম।
যেমন - থেমে থেমে কথা বলা আমি পছন্দ করি না। এখানে থেমে থেমে কথা বলা হল বাক্যাংশ কর্ম।
৩। করণ কারক
কর্তা যার সাহায্যে ক্রিয়া সম্পাদন করে তাকে বলে করন কারক। যেমন - অনেকেই বাঁ-হাত দিয়ে লেখে। বাক্যের কর্তা লেখা ক্রিয়াটি সম্পাদন করে বাঁ-হাত দিয়ে। বাঁ-হাতের সঙ্গে কর্তার সম্পর্ক কারণ সম্পর্ক।
সাধারণত বাক্যের ক্রিয়া পদটিকে কার দ্বারা, কার সহিত, কিসের দ্বারা, কি দিয়ে ইত্যাদি প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় তাই হল করণ কারক।
করণ কারককে শূন্য, এ, এর, তে, য়ে ইত্যাদি বিভক্তি এবং দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক, হইতে, করিয়া, করে ইত্যাদি অনুসর্গের প্রয়োগ ঘটে।
বিভিন্ন প্রকারের করণ কারক
(ক) যন্ত্রাত্মক করন
ক্রিয়া সম্পাদনের ক্ষেত্রে পার্থিব বস্তু বা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য উপকরণকে যন্ত্রাত্মক করন বলে।
যেমন - বটিতে হাত কাটল। টাকায় সব মেলে, বন্ধুত্ব মেলে না। এখানে বটিতে এবং টাকায় হল যন্ত্রাত্মক করন।
(খ) উপয়াত্মক করণ
ক্রিয়া সম্পাদনের উপকরণটি ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য না হলে তাকে উপয়াত্মক করণ বলে। যেমন – ঘৃণায় তাকে বিদ্ধ করেছে। হিংসায় নয়, প্রেমে জয় করো।
(গ) সমধাতুজ করন
বাক্যের কারণ কারক ও ক্রিয়াপদ বা ক্রিয়াজাত বিশেষণ একই ধাতু থেকে নিষ্পন্ন হলে তাকে সমধাতুজ করণ বলে। যেমন- ‘মাথার বাঁধনে বেধেছি'। ‘তার দেহখানি জরায় জীর্ণ’।
(ঘ) কালজ্ঞাপক করন
যে করন সময় ও কাল প্রকাশ করে তাকে বলে কালজ্ঞাপক করণ কারক। যেমন- ‘দুদিনেই সব কাজ মিটে গেল’, ‘মুহূর্তে ফিরে এলো সেই ভয়ংকর ভূমিকম্প'।
(ঙ) হেতুময় করণ
যে করণ কারক হেতু বা কারণ কি নির্দেশ করে তাকে হেতুময় করন কারক বলে। যেমন- ‘খুশিতে ভরে গেল মন প্রাণ’, ‘ধূপের গন্ধে ঘরটি পবিত্র হয়ে উঠল’।
(চ) করণে বিপ্সা
একই শব্দ পরপর দুবার ব্যবহার করে করণ কারকের ভাব বোঝালে তাকে করণে বিপ্সা বলা হয়। যেমন- মেঘে মেঘে বেলা হল। গানে গানে তব বন্ধন থাক অটুট।
৪। নিমিত্ত কারক বা সম্প্রদান কারক
যখন কোন ব্যক্তি প্রাণী বা বস্তু জন্য (নিমিত্ত) বাক্যের কর্তা কোন ক্রিয়া সম্পাদন করে তখন যার জন্য কাজটি হয় তাকে বলা হয় নিমিত্তকারক। অর্থাৎ যাকে কোনো কিছু নিঃস্বার্থভাবে দান করা হয়, দানের সেই পাত্রকে সম্প্রদান কারক বলে। যেমন—অন্নহীনে অন্নদান করো। অন্ধজনে দেহ আলো। (অন্ধজনের নিমিত্তে) বন্যাত্রাণে অর্থ দাও। ক্রিয়ার সঙ্গে নিমিত্ত সম্বন্ধ (নিমিত্ত, জন্য ইত্যাদি অর্থ) বোঝাতে নিমিত্ত কারক হয়।
বাংলায় সম্প্রদান কারকের জন্য কোনো বিভক্তি পৃথক করে নির্দিষ্ট নেই। সাধারণত কর্মকারকের বিভক্তি দিয়ে সম্প্রদানের কাজ চালানো হয়। তে, এর, এরে, কে, এ, য়, যে, তে, রে, র ইত্যাদি বিভক্তি চিহ্ন যুক্ত হয় ৷
বাংলা ভাষায় নিমিত্ত কারকের দৃষ্টান্ত প্রচুর। যেমন—
বেলা যে পড়ে এল জলকে চল। এখানে জলের নিমিত্ত যাওয়া। সুতরাং চল ক্রিয়ার সঙ্গে জলের নিমিত্ত সম্পৰ্ক আছে।
তোমার পতাকা যারে দাও। ‘যারে’ অর্থাৎ ‘যার জন্য’। ‘মৃতজনে দেহ প্রাণ’। ‘মৃতজনে’ অর্থাৎ মৃতব্যক্তির নিমিত্ত৷
জগন্নাথে দিব কন্যা হয়ে সৃষ্ট মনে। অর্থাৎ জগন্নাথের নিমিত্ত।
৫। অপাদান কারক
যা থেকে কোনো কিছু বিচ্যুত, বিশ্লিষ্ট, ভীত, রক্ষিত, উৎপন্ন, গৃহীত, মুক্ত, বিরত প্রভৃতি বোঝায়, তাকে অপাদান কারক বলে। যেমন—তিল থেকে তেল হয়। গাছ থেকে ফলটি পড়ল। বাদল মেঘে বৃষ্টি হয়।
অপাদান কারকে শূন্য, এর, এ, য়, তে বিভিন্ন বিভক্তির প্রয়োগ এবং হইতে, থেকে, দ্বারা, দিয়া, নিকট, উপেক্ষা, দিয়ে ইত্যাদি অনুসর্গের ব্যবহার হয়।
নানা প্রকার অপাদান কারক হয়। যেমন-
(ক) আধার বা স্থানবাচক > বাক্স থেকে টাকা বের করো।
(খ) কালবাচক > বৈশাখ মাসে ঝড় হয় ।
(গ) দূরত্ববাচক > মালদা থেকে দিল্লি অনেক দূরের পথ।
(ঘ) বিরতি অর্থে > কবে কাজ থেকে বিরতি পাব।
(ঙ) বিকৃতিবাচক > দুধে দই হয়, ছানা হয় ।
(চ) তুলনাবাচক > জননী ও জন্মভূমি স্বর্গ থেকে বড়ো।
৬। অধিকরণ কারক
বাক্যে ক্রিয়াটি যে স্থানে বা সময়ে সম্পন্ন হয় তাকেই অধিকরণ কারক বলা। অর্থাৎ সংক্ষেপে বলা যায় ক্রিয়া যে জায়গায় বা সময়ে অনুষ্ঠিত হয়, তাঁর সঙ্গে ক্রিয়ার সম্পর্কই অধিকরণ কারক।
যেমন—বনে বাঘ থাকে, জলে থাকে মাছ, হাটে তাঁর সঙ্গে দেখা হল।
অধিকরণ কারকে শূন্য, কে, এর, য়, এ ইত্যাদি বিভিন্ন বিভক্তির প্রয়োগ এবং দিয়ে, থেকে, চেয়ে, মাঝে, মধ্যে, উপরে, ভিতরে, পরে ইত্যাদি অনুসর্গের ব্যবহার লক্ষ করা যায়।
অধিকরণ কারকের শ্রেণিবিভাগ
স্থানাধিকরণ কারক
যে স্থানে ক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়, সেই স্থানকে স্থানাধিকরণ কারক বলে। স্থানাধিকরণ কারক আবার তিনপ্রকার—(ক) একদেশসূচক (খ) ব্যাপ্তিসূচক এবং (গ)সামীপ্যসূচক।
(ক) একদেশসূচক
সমগ্র স্থান জুড়ে নয়, মাত্র কোনো বিশেষ অংশে কোনো কিছুর অবস্থান বোঝালে একদেশসূচক স্থানাধিকরণ কারক হয় । যেমন—আকাশে রামধনু উঠেছে। (আকাশের সর্বত্র নয়, কোনো অংশে)
(খ) ব্যাপ্তিসূচক
কোনো বিশেষ অংশে নয়, সর্বত্র জুড়ে থাকা বোঝালে ব্যাপ্তিসূচক স্থানাধিকরণ কারক হয়। যেমন—তিলে তেল আছে। সমুদ্র জলে লবণ আছে। ফুলে গন্ধ আছে।
(গ) সামীপ্যসূচক
নৈকট্য বোঝালে সামীপ্যসূচক স্থানাধিকরণ কারক হয় । যেমন—শীতকালে গঙ্গাসাগরে মেলা বসে। (সাগর অর্থে সাগর তীরে), ত্রিবেণী সংগমে কুম্ভ মেলা হয়। (সংগমে অর্থে সংগম তীরে)।
কালাধিকরণ কারক
যে সময়ে ক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়, সেই সময়কে কালাধিকরণ কারক বলে। যেমন—কালাধিকরণ কারক দু-প্রকার— (ক) ক্ষণমূলক (খ) ব্যাপ্তিমূলক।
(ক) ক্ষণমূলক
অতিঅল্প সময়ের মধ্যে ক্রিয়াটি অনুষ্ঠিত হলে ক্ষণমূলক কালাধিকরণ কারক হয়। যেমন—বিকেল পাঁচটায় সভা বসবে।
(খ) ব্যাপ্তিমূলক
ক্রিয়া নিষ্পন্নের সময় যদি দীর্ঘকাল ধরে হয়, তবে ব্যাপ্তিমূলক কালাধিকরণ কারক হয়। যেমন—পৌষে প্রবল শীত।
বিষয়াধিকরণ কারক
কোনো বিষয়ে বা ব্যাপারে ক্রিয়া অনুষ্ঠিত হলে বিষয়াধিকরণ হয়। যেমন—রাম ব্যাকরণে পণ্ডিত। স্মৃতি লোকগীতিতে প্রথম হয়েছে।
________________________________________________
- মানুষের চোখ সম্পর্কিত বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
- অপিনিহিতি , অভিশ্রুতি, ব্যঞ্জনসংগতি, নাসিক্যিভবন সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
- পদ ও তার প্রকারভেদ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
- স্বরভক্তি বা বিপ্রকর্ষ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
- শব্দ ও তার প্রকারভেদ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
- ধ্বনির পরিচয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
- ধ্বনি পরিবর্তনের রীতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
- ভাষা ও উপভাষা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
- মুণ্ডমাল শব্দ, জোড়কলম শব্দ, যোগরূঢ় শব্দ, লোকনিরুক্তি সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।