মুণ্ডমাল শব্দ | জোড়কলম শব্দ | যোগরূঢ় শব্দ | লোকনিরুক্তি কাকে বলে এবং উদাহরণ দাও।

 

মুণ্ডমাল শব্দ জোড়কলম শব্দ যোগরূঢ় শব্দ লোকনিরুক্তি কাকে বলে

Table Of Content (toc)

মুণ্ডমাল শব্দ কাকে বলে এবং উদাহরণ দাও।

কোনো বাক্য বা বাক্যাংশের অন্তর্গত শব্দগুলির আদ্যক্ষর নিয়ে যে শব্দ গঠিত হয়, তাকে বলা হয় মুণ্ডমাল শব্দ। যেমন—লঘিষ্ঠ সাধারণ গুণিতক = লসাগু, গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক = গসাগু, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ = বসাপ, প্রমথনাথ বিশী = প্রনাবি ইত্যাদি।


জোড়কলম শব্দ কি উদাহরণ সহযোগে আলোচনা কর।

একটি শব্দ বা তার অংশবিশেষের সঙ্গে অন্য একটি শব্দ বা তার অংশবিশেষ যুক্ত করে যদি নতুন একটি শব্দ তৈরি করা হয়, তবে তাকে জোড়কলম শব্দ বলে। যেমন—মিন্নৎ (আরবি) + বিজ্ঞপ্তি (সংস্কৃত)= মিনতি, ধোঁয়া + কুয়াশা = ধোঁয়াশা, নিশ্চল (সংস্কৃত) + চুপ (বাংলা) =নিশ্চুপ, হাঁস + সজারু হাঁসজারু, বক + কচ্ছপ = বকচ্ছপ ইত্যাদি।

সুকুমার রায়ের একটি কবিতায় জোড়কলম শব্দের চমৎকার দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। কবিতাটি হল- 

“হাঁস ছিল সজারু (ব্যাকরণ মানি না) / হয়ে গেল ‘হাঁসজারু’ কেমনে তা জানি না/বক কহে কচ্চপে বাহবা কি ফূর্তি/অতি খাসা আমাদের এই বকচ্ছপ মূর্তি।”

যোগরূঢ় শব্দ কাকে বলে এবং উদাহরণ দাও। 

প্রকৃতি ও প্রত্যয় যোগে গঠিত শব্দ যদি প্রকৃতিগত অর্থগুলির মধ্যে বিশেষ একটি অর্থকে প্রকাশ করে, তাকে যোগরূঢ় শব্দ বলে।

যেমন—পঙ্কজ (পদ্ম) শব্দটি ‘পদ্ম’ এই বিশেষ অর্থকেই প্রকাশ করে।


লোকনিরুক্তি কাকে বলে এবং উদাহরণ দাও। 

লোকসাধারণের জ্ঞান-বিশ্বাস অনুসারে নির্ণীত ব্যুৎপত্তির উপর নির্ভর করে শব্দের যে ধ্বনি পরিবর্তন হয়, তাকে বলা হয় লোকনিরুক্তি।

যেমন—ঊর্ণবাভ (বৈদিক) > ঊর্ণনাভ (বাংলায়)।

বৈদিক ভাষায় মাকড়সার প্রতিশব্দ ছিল ‘ঊর্ণবাভ’। এই মূল শব্দটি ‘বড়’ ধাতু থেকে এসেছে যার অর্থ হল ‘বয়ন করা’ কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে ‘বভ্‌’ ধাতু পরে অপ্রচলিত হয়ে যায় এবং লোকসাধারণের মধ্যে এই বিশ্বাস গড়ে ওঠে যে মাকড়সা তার নাভি থেকে সুতোর মতো একপ্রকার লালা বের করে তা থেকে জাল তৈরি করে। লোকবিশ্বাসের ওই ‘নাভি’ শব্দের উপর ভিত্তি করে শব্দটির নতুন ব্যুৎপত্তি করে নেওয়া হয়েছে ‘ঊর্ণনাভ’। ঠিক একইভাবে—আর্ম চেয়ার > ‘আরাম চেয়ার’ বা ‘আরাম কেদারা’, লজেন্স >ল্যাবেন চুষ, ভ্রমার্থী > ভীমরথী/ভীমরতি ইত্যাদি।


মাত্রাপুরক দীর্ঘীভবন/ক্ষতিপুরক দীর্ঘীভবন/পরিপূরক দীর্ঘীভবন কাকে বলে ও উদাহরণ দাও। 

শব্দের মধ্যে কোনো ব্যঞ্জনধ্বনি লোপ পেলে সেই লোপের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য অনেক সময় তার পূর্ববর্তী হ্রস্বস্বর দীর্ঘস্বরে রূপান্তরিত হয়ে যায়। ধ্বনি পরিবর্তনের এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় মাত্রাপুরক দীর্ঘীভবন বা ক্ষতিপুরক দীর্ঘীভবন। যেমন—সপ্ত > সত্ত > সাত, হস্ত > হখ> হাত, ধর্ম > ধৰ্ম্ম > ধাম, কর্ম > কৰ্ম্ম > কাম ইত্যাদি।

সংকর শব্দ বা মিশ্র শব্দ কাকে বলে এবং উদাহরণ দাও। 

বিভিন্ন ভাষার উপাদান যোগ করে কোনো ভাষায় একটি নতুন শব্দ তৈরি করা হলে, তাকে সংকর শব্দ বা মিশ্র শব্দ বলে। 

যেমন— ইংরেজি 'মাস্টার + বাংলা প্রত্যয় 'ই' = মাস্টারি, ফারসি 'ফি' + বাংলা ‘বছর’ = ফি বছর,  পোর্তুগিজ ‘পাও’ + হিন্দি ‘রোটি' = পাওরুটি, বাংলা 'কহা' + সংস্কৃত ‘তব্য' প্রত্যয় = কহতব্য ইত্যাদি।


ভুয়া শব্দ (Ghost word) কাকে বলে এবং উদাহরণ দাও। 

অনেক সময় শব্দের একটি কল্পিত মূল উপাদান খাড়া করে নিয়ে তার সঙ্গে বিভক্তি প্রত্যয় প্রভৃতি যোগে এমন শব্দ গঠন করা হয়, যার মূল উৎসটি ওই ভাষায় ছিলই না, এই ধরনের শব্দকে বলা হয় ভুয়া শব্দ। 

যেমন- ‘প্রোথিত' শব্দ। এখানে কল্পিত মূল উপাদান হচ্ছে ‘প্রোথ’ ধাতু। এর সঙ্গে ‘ইত’-প্রত্যয় যোগ করে হয়েছে ‘প্রোথিত’। কিন্তু এর মূল যে ‘প্ৰোথ’ ধাতু সংস্কৃতে তার উৎস পাওয়া যায় না।

আরও জানুন >>

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad