পদ কাকে বলে ও তার শ্রেণীবিভাগ। বিশেষ্যপদ, বিশেষনপদ,সর্বনামপদ,অব্যয় ও ক্রিয়াপদ সম্পর্কে আলোচনা করা হল | Parts of Speech and it's classification


পদ কাকে বলে ও তার শ্রেণীবিভাগ 

যখন শব্দ ব্যবহৃত হয় তখন শব্দগুলোর মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টির জন্য প্রতিটি শব্দের সঙ্গে কিছু অতিরিক্ত শব্দ যুক্ত হয় এগুলোকে বলা হয় বিভক্তি। যেসব শব্দ আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় কোন বিভক্তি যুক্ত হয় নি, সেসব শব্দও একটি বিভক্তি যুক্ত থাকে একে প্রথমা বিভক্তি বা শূন্য বিভক্তি বলে। ব্যাকরণ অনুযায়ী কোন শব্দ বাক্যে ব্যবহৃত হলে তাতে বিভক্তি যুক্ত হতে হয়। আর তাই কোন শব্দ বাক্যে বিভক্তির না নিয়ে ব্যবহৃত হলেও তার সঙ্গে একটি বিভক্তি যুক্ত হয়েছে বলে ধরে নিয়ে তাঁকে শূন্য বিভক্তি বলা হয়।

 অর্থাৎ বিভক্তিযুক্ত শব্দকে পদ বলে।

পদ মোট পাঁচ প্রকার 

1. বিশেষ্য পদ 

2. বিশেষণ পদ 

3. সর্বনাম পদ

4. অব্যয় 

5. ক্রিয়া 

Table of Content (toc)

  1. বিশেষ্য পদ 

বাক্যের মধ্যে ব্যবহৃত যে সমস্ত পদ দ্বারা কোন ব্যক্তি, জাতি, বস্তু, সমস্টি, স্থান, কাল, কর্ম বা গুন ইত্যাদির নাম বোঝায় তাকে বিশেষ্য পদ বলে। 

বিশেষ্য পদ ছয় প্রকারের—

  • নামবাচক বা সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য : কোন ব্যক্তির নাম, ভৌগোলিক স্থান এবং গ্রন্থের নাম কে বোঝায়। যেমন– রবীন্দ্রনাথ, দিল্লী, গঙ্গা, হিমালয়, সাগর-মহাসাগর, গীতাঞ্জলি, অগ্নিবীণা, ইত্যাদি। 


  • জাতিবাচক বিশেষ্য:– এক জাতীয় প্রাণী বা পদার্থের সাধারণ নাম কে বোঝায়। যেমন:–গরু, ছাগল, পাখি, পর্বত, নদী, ইত্যাদি। 


  • বস্তুবাচক বিশেষ্য :– বস্তু ও পদার্থ ও দ্রব্যের নামকে বোঝায়। যেমন:– বই-খাতা–কলম, চিনি, পানি, ইত্যাদি। 
  • সমষ্টিবাচক বিশেষ্য:– ব্যক্তি বা প্রানীর সমষ্টির নামকে বোঝায়। যেমন:– সভা, ঝাক, দল, ইত্যাদি। 
  • গুনবাচক বিশেষ্য:– দোষ বা গুণ কে বোঝায়। যেমন– 

  মধুর মিষ্টত্বের গুন→ মধুরতা

 তরল দ্রব্যের গুন→তারল্য

 তিক্ত দ্রব্যের গুন বা দোষ‌→ তিক্ততা

   তরুনের গুন→ তারুণ্য 

  সততা, সৌরভ, স্বাস্থ্য, যৌবন, সুখ-দুঃখ ইত্যাদি। 

  • ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য  : ক্রিয়ার ভাব বা কাজের ভাব কে বোঝায়। যেমন– গমন, চলন, শয়ন, দর্শন, শ্রবণ, ইত্যাদি। 


2. সর্বনাম :–

বাক্যের মধ্যে ব্যবহৃত বিশেষ্য পদের পরিবর্তে যে পদ ব্যবহৃত হয় তাকে সর্বনাম পদ বলে। অনুচ্ছেদে একই বিশেষ্য বারবার আসতে পারে। সে ক্ষেত্রে একই পদ বারবার ব্যবহার করলে তা শুনতে খারাপ লাগাটা স্বাভাবিক তাই পুনরাবৃত্তি রোধ করার জন্য বিশেষ্য পদের পরিবর্তে যে বিকল্প শব্দ ব্যবহার করে সেই বিশেষ্য পদকেই বোঝানো হয়, তাকে সর্বনাম বলে। 

সর্বনাম পদ গুলিকে অনেক ভাগে ভাগ করা হয়—

  • আত্মবাচক সর্বনাম:– স্বয়ং, নিজে, খোদ,  আপনি 
  • ব্যক্তি বাচক সর্বনাম:– আমি, আমর,  তুম,  তোমর, সে, তিনি, তারা 
  •  সমীপ্য বাচক সর্বনাম:– এ, এই, এরা, ইহারা, ইনি
  • সাকল্যবাচক সর্বনাম:– সব, সকল, সমুদয় 
  • প্রশ্ন বাচক সর্বনাম:– কে, কি, কোন, কাহার, কার, কিসে,
  • পরিমান বাচক সর্বনাম:– যত, তত, কত, এত 
  • সংযোগ জ্ঞাপক সর্বনাম:– যে, যিন, যারা, তারা, যাহারা 
  • ব্যতিহারী সর্বনাম:– আপনা -আপনি, নিজে-নিজে, পরস্পর
  • অনির্দিষ্ট জ্ঞাপক সর্বনাম:– কোন, কেহ, কেউ, কিছু 
  • অন্যাদি বাচক সর্বনাম:– অপর, অন্য, পর


3.বিশেষন পদ 

যে পদ বাক্য মধ্যে ব্যবহৃত বিশেষ্যের দোষ, গুণ, অবস্থা, পরিমাণ, সংখ্যা প্রভৃতি বোঝায় সেই পদকে বিশেষণ পদ বলে।

যেমন– পাকা আম খেতে মিষ্টি→ আমের মিষ্টতা

অমল বিশাল সম্পত্তির মালিক→ সম্পত্তির পরিমাণ

অমল সাহেব সুখী ব্যক্তি→ ব্যক্তির গুন

বিশেষণ পদের প্রকারভেদ—

  • নাম বিশেষণ বা বিশেষ্যের বিশেষণ:– সর্বনাম ও বিশেষ্য এর দোষ গুণ অবস্থা কে প্রকাশ করে। 

যেমন — সে অতি শান্ত→বিশেষণের বিশেষণ 

মেয়েটিঃ বেশ ভালো→ বিশেষ্যের বিশেষণ

লোকটির মেজাজ খুব নরম→ বিশেষ্যের বিশেষণ

চলন্ত গাড়ি→ বিশেষ্যের বিশেষণ

করুণাময়ী তুমি→ বিশেষণের বিশেষন

  • ক্রিয়া বিশেষণ :– যে পদ ক্রিয়ার গুন বা অবস্থা প্রকাশ করে তাকে ক্রিয়া-বিশেষণ বলে। 

যেমন– আস্তে চল, 

ধীরে ধীরে অগ্রসর হবো ইত্যাদি। 


4.অব্যয় 

যে সকল পদ লিঙ্গ, বচন, বিভক্তি ভেদে কোন প্রকার রুপান্তরিত হয় না অর্থাৎ যাদের মুল রুপের কোন ব্যায় বা পরিবর্তন হয় না তাদের অব্যয় পদ বলে।

অব্যয়ের শ্রেণিবিভাগ হল—

  • পদান্নয়ী অব্যয় :- যে সমস্ত অব্যয় বাক্যের বিভিন্ন পদের মধ্যে অন্বয় স্থাপন করে তাকে পদান্নয়ী অব্যয় বলে। যেমন- দুঃখ বিনা সুখ লাভ কি হয় মহীতে।
  • বাক্যান্নয়ী অব্যয় :- এই প্রকার অব্যায় একাধিক বাক্যের সংযোগ, বিয়োগ বা সংকোচন ঘটায়। যেমন-যে দিন প্রথম ডাক্তার দেখল এবং সেই দিনই ডাক্তারের শেষ দেখা হল।
  • ভাববাচক অব্যয় :- এই প্রকার অব্যয় মনের বিভিন্ন প্রকাশ করে থাকে। যেমন- হায় হায় কি সর্বনাশই না হল।
  • ধ্বনাত্বক অব্যয় :- এই প্রকার অব্যয় বাস্তব ধ্বনির ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করে। যেমন-ঝাঁঝাঁ, টলমল, খাঁখাঁ, ঝলমল, চকচক, ইত্যাদি। 
  • বাক্যালংকার অব্যয় :- এই প্রকার অব্যয় শব্দের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত হয়। যেমন- এ তো মানুষ নয় যে দেবতা নিশ্চয়ই। 
  • সাপেক্ষ শব্দ জোড় :- যে সব অব্যয় বাক্যে ব্যবহারের সময় একে অপরের উপর নির্ভরশীল থাকে সেই সব অব্যয়কে সাপেক্ষ শব্দজোড় বলে। যেমন-যদি সে আসে তবে আমি যাব। 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad