1) মিনামাটা:
মানবদেহে পারদের মাত্রা গ্রাহামাত্রা ছাড়িয়ে গেলে তখন যেসব লক্ষণ প্রকাশ পায় তা হল মিনামাটা।
রোগের কারণ : অতিরিক্ত পারদ গ্রহণ
রোগের উপসর্গ : মস্তিষ্কের স্নায়ুকোশ বিনষ্ট হয়, পেশির অসাড়তা, বধির ও দৃষ্টিহীনতা, হাত-পা কাঁপা ইত্যাদি।
2) ডিসলেক্সিয়া:
মানবদেহে সিসা গ্রহণ গ্রাহ্য মাত্রা ছাড়িয়ে যায় তাহলে যেসব উপসর্গ দেখা দেয় তা হল ডিসলেক্সিয়া রোগের
রোগের কারণ : অতিরিক্ত সিসা গ্রহণ।
রোগের উপসর্গ : কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়, ক্ষুধামান্দ্য, কোষ্ঠকাঠিন্য, বমি-বমি ভাব, ক্লান্তি ও পেশি দৌর্বল্য, উচ্চরক্তচাপ, রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা হ্রাস পাওয়া ইত্যাদি।
3) ইটাই-ইটাই:
মানবদেহে ক্যাডমিয়ামের মাত্রা গ্রাহ্যসীমা ছাড়িয়ে যায় তখন যেসব লক্ষণ প্রকাশ পায় তা হল ইটাই ইটাই রোগের লক্ষণ।
রোগের কারণ: অতিরিক্ত ক্যাডমিয়াম গ্রহণ
রোগের উপসর্গ: রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়, রক্তাল্পতা, হৃদরোগ হয়, যকৃৎ ও মূত্রাশয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়, অস্থির ক্ষয়, পেটের অসুখ হয়, বৃক্কের গোলযোগ দেখা দেয়।
4) আর্সেনিক দূষণ
- জল বা মাটিতে স্বাভাবিকের তুলনায় অতিরিক্ত আর্সেনিক উপস্থিত থাকলে তাকে আর্সেনিক দূষণ বলে। আর্সেনিক মৌলটি বিভিন্ন ধাতব যৌগ আকারে মাটি ও জলে মিশে মাটি বা জলের দূষণ ঘটায়। আর্সোনেট, আর্সেনাইট, আর্সেন অক্সাইড, আর্সিন গ্যাস ইত্যাদি যৌগগুলির উপস্থিতিতে জলদূষণ বা মাটিদূষণ ঘটে। বিভিন্ন কীটনাশক ও আগাছানাশক, যেমন-লেড আর্সেনেট, ক্যালশিয়াম আর্সেনেট, সোডিয়াম আর্সেনাইট, কপার অ্যাসিটো আর্সেনাইট, প্যারিস গ্রিন ইত্যাদি যৌগগুলি আর্সেনিক দূষণের মূল উৎস। সোনা বা সিসার আকরিকে ও কয়লার মধ্যেও আর্সেনিক থাকে।
আর্সেনিক দূষণের প্রভাব:
- আর্সেনিক দূষণের প্রভাব মানুষ, জীবজন্তু, উদ্ভিদ ও পরিবেশ সর্বত্রই পরিলক্ষিত হয়।
মানবদেহে আর্সেনিক দূষণের প্রভাব:
- মানবদেহে আর্সেনিক দূষণঘটিত রোগকে 'আর্সেনিকোসিস' বলে। এই রোগের লক্ষণগুলি হল-
- হাতের তালু ও পায়ের চেটোর চামড়া কড়া পড়ার মতো শক্তহয়ে যায় এবং কালো ছোপ পড়ে ও আঁচিলের মতো টিবি তৈরি হয়। পায়ের তলায় কালো ছোপ পড়া রোগকে 'ব্ল্যাক ফুট ডিজিজ' বলে।
- শারীরিক অবসাদ, দুর্বলতা, হাত-পা ঝিন-ঝিন করা, পেশিতে টান ধরা ইত্যাদি।
- বুকে, পিঠে, হাতে, পায়ে স্থানে স্থানে চামড়ার ওপর শুকনো ঘায়ের মতো হয়। মুখে ও গায়ে কালচে-নীল ছোপ দেখা যায়।
- নখের গোড়ার দিকে আড়াআড়ি সরু সাদা দাগ দেখা যায়। একে 'মিজ রেখা' বলে।
- গায়ে চুলকানি হয় এবং অনেক সময় ত্বকের ক্যানসার বা কার্সিনোমা রোগ হয়।
- ফুসফুসে প্রদাহ, ব্রংকাইটিস, অ্যাজমা ইত্যাদি হয়।
- রক্তাল্পতা দেখা দেয়।
- মূত্রনালির রোগ হয়।
- চূড়ান্ত বিষক্রিয়ায় ক্ষুধামান্দ্য, পেটব্যথা, পাতলা পায়খানা, বমি ইত্যাদি লক্ষণ প্রকাশ পায়।
উদ্ভিদদেহে আর্সেনিক দূষণের প্রভাব:
- উদ্ভিদের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
- উদ্ভিদকোশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
- উদ্ভিদকোশে ফসফরাস বিপাকের বাধার সৃষ্টি হয়।
জীবজন্তুর ওপর আর্সেনিক দূষণের প্রভাব:
- জীবজন্তুর চর্মরোগ হয়।
- এদের যকৃতের রোগ হয়।
- জীবজন্তুর ফুসফুস আক্রান্ত হয়।
পরিবেশে আর্সেনিক দূষণের প্রভাব:
- ভূগর্ভস্থ জল বা ভৌমজল দূষিত হয়।
- মাটির দূষণ ঘটে।
- বায়ুদূষণ ঘটায়
5) ইউট্রফিকেশন
- যে পদ্ধতিতে কোনো জলাশয়ের রাসায়নিক পদার্থ (মূলত ফসফেট) মেশার ফলে জলজ উদ্ভিদের (শৈবাল) ব্যাপক বৃদ্ধি ঘটে এবং জলে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয় তাকে ইউট্রফিকেশন বলে।
ইউট্রফিকেশনের কারণ:
- জমিতে ব্যবহৃত ফসফেট সার জলে মিশলে।।
- আবর্জনা-শোধন কেন্দ্রের নির্গত অজৈব পরিপোষক জলাশয়ে মিশলে।
- ফসফেট জাতীয় ডিটারজেন্ট জলে মিশলে।
- মাটির ক্ষয়জনিত কারণে কোনো উর্বর বস্তু জলে মিশলে।
- জলাশয়ে আবর্জনা ফেলার ফলে অজৈব পরিপোষক বৃদ্ধি পেলে।
ইউট্রফিকেশনের ফলে ক্ষয়ক্ষতি:
- শৈবালের বৃদ্ধি ঘটে এবং অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়, ফলে শৈবালের পচন ঘটে এবং জলদূষিত হয়। একে শৈবাল ব্লুম বলে।
- জলদূষণের ফলে জলজ প্রাণীর যেমন মৃত্যু হয় তেমনি গবাদিপশুও ওই জল পান করে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং তাদের মৃত্যুও হতে পারে।