শ্রেণীবিভাগগুলি হল
- (১) পার্বত্য অঞ্চলের মাটি
- (২) তরাই অঞ্চলের মাটি
- (৩) ল্যাটেরাইট মাটি
- (৪) সমভূমির লাল পলিমাটি
- (৫) উপকূলীয় অঞ্চলের লবণাক্ত মাটি।
এছাড়াও আরও এক প্রকার মাটি দেখা যায়, সেটি হল- (৬) রাঢ় অঞ্চলের কাঁকরযুক্ত পলিমাটি।
সমভূমি অঞ্চলের মাটি দুই প্রকার (i) সমভূমির প্রাচীন পলিমাটি (ii) সমভূমির নবীন পলিমাটি।
(১) পার্বত্য অঞ্চলের মাটি
অবস্থান: দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ার-এর পার্বত্য অঞ্চল।
বৈশিষ্ট্য:
- (i) এটি ধূসর বাদামি রঙের পডসল মাটি।
- (ii) দার্জিলিং অঞ্চলের মাটি অম্ল প্রকৃতির।
- (iii) নুড়ি ও কাঁকরযুক্ত এই মাটিতে ধৌত প্রক্রিয়া বেশি হয়।
- (iv) হিউমাস মিশ্রিত মাটিতে ক্ষয় ও ভূমিধস বেশি হয়।
- (v) এই মাটিতে পটাশ ও ফসফরাসের পরিমাণ বেশি থাকে।
- (vi) স্যাঁতসেঁতে অঞ্চলে এই মাটি গাঢ় ও পিটযুক্ত।
- (vii) সরলবর্গীয় বনভূমি অধ্যুষিত অঞ্চলের মাটিতে নাইট্রোজেন কম থাকে।
উল্লেখযোগ্য ফসলের চাষ:
- এই মাটির উর্বরতা কম এবং পার্বত্য ঢালে উদ্ভিদের আচ্ছাদন বেশি থাকায় চাষাবাদ তেমন হয় না। চা, আলু, স্কোয়াশ, ভুট্টা, সিঙ্কোনা, কমলালেবু প্রভৃতি এই মাটির উল্লেখযোগ্য ফসল।
(২) তরাই অঞ্চলের মাটি
অবস্থান: উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলের দক্ষিণে তরাই-ডুয়ার্স অঞ্চল।
বৈশিষ্ট্য:
- (i) এই মাটি স্থূল বালুকাময়-দোঁয়াশ প্রকৃতির।
- (ii) এই মাটিতে কাঁকর ও নুড়ির পরিমাণ বেশি থাকে।
- (iii) এই মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ এবং উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদান বেশ কম থাকে।
- (iv) এই মাটি অম্ল প্রকৃতির।
- (v) এই মাটি অপেক্ষাকৃত উর্বর।
উল্লেখযোগ্য ফসলের চাষ:
- এই মাটি চা ও ফুল চাষের পক্ষে আদর্শ। এছাড়া ধান, পাট, তামাক, সূর্যমুখী, আলু, গম, জোয়ার, কমলালেবু প্রভৃতি ফসলের চাষ করা হয়।
(৩) ল্যাটেরাইট মাটি
অবস্থান: পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলের পুরুলিয়া এবং বাঁকুড়া, বর্ধমান জেলার পশ্চিম অংশ ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার উত্তর-পশ্চিম অংশ।
বৈশিষ্ট্য:
- (i) এই মাটি লালচে বাদামি রঙের। ইটের মতো শক্ত এই মাটিতে লোহার ভাগ বেশি থাকে বলে এর রং লাল (লাতিন শব্দ ল্যাটার ইট)।
- (ii) এই মাটি খুবই অম্ল প্রকৃতির।
- (iii) এই মাটির জলধারণ ক্ষমতা কম।
- (iv) এই মাটিতে চুন, ম্যাগনেশিয়াম ও নাইট্রোজেনের ঘাটতি দেখা যায়।
- (v) এই মাটি কাঁকরপূর্ণ ও অনুর্বর।
উল্লেখযোগ্য ফসলের চাষ:
- এই মাটিতে চাষাবাদ ভালো হয় না। জলসেচের সুবিধা থাকলে সামান্য পরিমাণে ধান, আখ, সরিষা প্রভৃতি উৎপন্ন হয়।
(৪) সমভূমির পলিমাটি
(a) সমভূমির লাল পলিমাটি
অবস্থান: পশ্চিমের মালভূমির পূর্ব প্রান্তীয় অঞ্চল ও রাঢ় সমভূমির পশ্চিমে বিচ্ছিন্নভাবে এবং মালদহ, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বারিন্দ অঞ্চল।
বৈশিষ্ট্য:
- (i) এই মাটির রঙ অপেক্ষাকৃত লাল। এতে লোহার আধিক্য দেখা যায়।
- (ii) এই মাটি বালুময় দোঁয়াশ থেকে স্কুল কর্দম প্রকৃতির।
- (iii) এই মাটির স্তরে মোরাম, ফেল্সপার ও চুনের উপস্থিতি দেখা যায়।
- (iv) এই মাটি অম্ল প্রকৃতির।
- (v) এতে জৈব পদার্থ ও উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি মৌল কম থাকে।
- (vi) এই মাটি উর্বর নয়।
উল্লেখযোগ্য ফসলের চাষ:
- সার ও জলসেচের সাহায্যে এই মাটিতে ধান, আখ, গম প্রভৃতি ফসলের চাষ করা হয়।
(b) সমভূমির প্রাচীন পলিমাটি
অবস্থান: কোচবিহার, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহ এবং পশ্চিমের ল্যাটেরাইট ও লাল মাটির প্রান্তীয় এক সংকীর্ণ বলয়ে মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, বর্ধমান, বাঁকুড়া, পশ্চিম ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলা।
বৈশিষ্ট্য:
- (i) ল্যাটেরাইট মাটির ধৌত প্রক্রিয়ার ফলে এই মাটির সৃষ্টি হয়েছে। এই মাটির রঙ পীত ও লাল।
- (ii) এই মাটি সামান্য অম্ল প্রকৃতির।
- (iii) এই মাটিতে জৈব পদার্থ ও উদ্ভিদের পুষ্টি মৌল অপেক্ষাকৃত কম থাকে।
- (iv) এই মাটিতে কাদার ভাগ বেশি থাকে।
- (v) এই মাটি অপেক্ষাকৃত উর্বর।
উল্লেখযোগ্য ফসলের চাষ:
- ধান, বিভিন্ন প্রকার ডাল, আলু, তামাক, বিভিন্ন সবজি এই মাটির প্রধান ফসল। এই মাটিতে আম গাছ ভালো জন্মায়।
(c) নবীন পলিমাটি
অবস্থান: সমগ্র গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ অঞ্চল এবং বিচ্ছিন্নভাবে কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর ও মালদহ জেলা।
বৈশিষ্ট্য:
- (i) এই মাটির রঙ ধূসর ও হালকা বাদামি।
- (ii) এই মাটিতে জৈব পদার্থ ও উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি মৌল খুব বেশি থাকে।
- (iii) এই মাটিতে পটাশ ও ফসফরাস খুব বেশি থাকে।
- (iv) এই মাটি সামান্য ক্ষার প্রকৃতির।
- (v) এই মাটি খুব উর্বর
- (vi) এই মাটিকে গঠন অনুসারে তিন ভাগে ভাগ করা হয়- বেলে, দোঁয়াশ ও এঁটেল।
উল্লেখযোগ্য ফসলের চাষ:
- এই মাটিতে ধান, পান, বিভিন্ন প্রকার ডাল, তৈলবীজ, তামাক, আখ, বিভিন্ন সবজি প্রচুর পরিমাণে জন্মায়।
(৫) উপকূল অঞ্চলের লবণাক্ত মাটি
অবস্থান: পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণে দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলার উপকূল অঞ্চল।
বৈশিষ্ট্য:
- (i) নদ-নদী ও সমুদ্র তরঙ্গের দ্বারা সঞ্চয়ের ফলে এই মাটির সৃষ্টি হয়েছে।
- (ii) এই মাটি সূক্ষ্ম বালুকাময় দোঁয়াশ প্রকৃতির।
- (iii) এই মাটি লবণাক্ত ও ক্ষারধর্মী।
- (iv) এই মাটিতে ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং স্বল্প জৈব পদার্থ থাকে।
- (v) সুন্দরবন উপকূল অঞ্চলের মাটিতে কাদার ভাগ বেশি এবং কাঁথি উপকূল অঞ্চলের মাটিতে বালির ভাগ বেশি দেখা যায়।
- (vi) এই মাটি অপেক্ষাকৃত উর্বর।
উল্লেখযোগ্য ফসলের চাষ:
- ধান, নারকেল, তরমুজ, কাজুবাদাম, বিভিন্ন ডাল প্রভৃতি এই মাটিতে চাষ করা হয়।
(৬) রাঢ় অঞ্চলের কাঁকরযুক্ত পলিমাটি
অবস্থান: রাঢ় সমভূমি অঞ্চল।
বৈশিষ্ট্য:
- (i) ল্যাটেরাইট ও পলিমাটির মিশ্রণে এই মাটির সৃষ্টি হয়েছে।
- (ii) এই মাটি বালি ও কাঁকরযুক্ত।
- (iii) এই মাটির জলধারণ ক্ষমতা কম।
- (iv) এই মাটিতে জৈব পদার্থ খুব কম থাকে।
- (v) এই মাটি সামান্য আম্লিক প্রকৃতির।
উল্লেখযোগ্য ফসলের চাষ:
- সার ও জলসেচের সাহায্যে ধান, আখ, তৈলবীজ, ডাল প্রভৃতি ফসলের চাষ করা হয়।