Slave Dynasty Details in Bengali | Medieval History in India | দাস বংশ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

Slave Dynasty Details in Bengali | Medieval History in India

 দিল্লির সুলতানি রাজবংশ 

➤১২০৬ খ্রীস্টাব্দ থেকে ১৫২৫ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত তুর্কী ও আফগান শাসকরা সুলতান নামে অভিহিত হতেন, তাই এই সময়কালকে 'সুলতানি যুগ' নামে অভিহিত করা হয়। দিল্লিতে এই সময় ৫টি রাজবংশ শাসন করত। সেই রাজবংশ গুলি হল - ১। দাস বংশ, ২। খলজী বংশ, ৩। তুঘলক বংশ, ৪। সৈয়দ বংশ, ৫। লোদি বংশ। আজকে  আমরা দাস বংশ নিয়ে আলোচনা করব।

Table Of Content (toc)

দাস বংশ (১২০৬-১২৯০ সাল)

কুতুবউদ্দিন আইবক (শাসনকাল ১২০৬-১২১০ খ্রী.)

➤ ১২০৬ খ্রী. কুতুবউদ্দিন আইবক দাস বংশের প্রতিষ্ঠা করেন। 

➤ তিনি দিল্লির প্রথম সুলতান এবং ভারতের দাস বংশের প্রতিষ্ঠাতা।

➤ মহম্মদ ঘোরির দাস ছিলেন কুতুবউদ্দিন আইবক।

➤ ১২০৬-১২১০ সাল পর্যন্ত এই চার বছর তিনি শাসন করেছিলেন।

➤ দিল্লিতে ‘কিউয়াদ-উল-ইসলাম' এবং আজমিরে ‘আড়াই-দিন- কা ঝোপড়া' মসজিদ নির্মাণ করেন। 

➤ তিনি বাগদাদের প্রখ্যাত ধর্মগুরু খাজা কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকির স্মৃতি রক্ষার উদ্দেশ্যে দিল্লিতে কুতুবমিনার নির্মাণ শুরু করেন।

➤ তাঁর দানশীলতা ও মহত্ত্বের জন্য তিনি লাখবক্স অথবা লক্ষ দাতা হিসাবে তিনি পরিচিত ছিলেন। 

➤ ১২১০ সালে লাহোরে পোলো খেলার সময় ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে তিনি মারা যান।

➤ তাঁর পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেন হাসান নিজামি।


আরাম শাহ (১২১০-১২১১খ্রী.)

➤ তিনি দাশ বংশের দ্বিতীয় সুলতান। 

➤ তিনি অকর্মন্য শাসক ছিলেন।

➤ ইলতুৎমিস তাঁকে পরাজিত করে সিংহাসনে বসেন। 

ইলতুৎমিস (১২১১-১২৩৬ খ্রী.)

➤ তাঁকে দিল্লি সুলতানির প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়।

➤ ইলতুৎমিস ছিলেন ইলবারি তুর্কি সম্প্রদায়ের লোক।

➤ তিনি প্রথম জীবনে সার-ই-জাহানদার বা রাজকীয় দেহরক্ষী হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন।

➤ ১২২৯ সালে বাগদাদের খালিফার কাছ থেকে সুলতান-ই-আজম উপাধি পান।

➤ তিনি সুলতানি শাসনের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।

➤ তিনি তুর্কান-ই-চাহালগানি বা চল্লিশা বা চল্লিশ চক্রের প্রবর্তন করেন।

➤ তিনি প্রথম নিয়মিত মুদ্রা চালু করেন।

➤ সুলতানি সময়ে দু'টি প্রাথমিক মুদ্রা প্রচলন করেন। সেগুলি হল রূপার ‘তঙ্কা’ এবং তামার ‘জিতল’।

➤ দিল্লিকে রাজধানী হিসাবে ঘোষণা করেন এবং দিল্লির নাম দেন 'হজরত-ই-দিল্লি।

➤ তিনি ইকতাদারি প্রথার প্রবর্তন করেছিলেন।

➤ ১২৩০ সালে মেহেরউল্লাতে ‘হজ-ই-শামসি’ ভাণ্ডার নির্মাণ করেন।

➤কুতুবউদ্দিন আইবকের শুরু করা কুতুব মিনার তিনি শেষ করেন।

➤ তার জ্যৈষ্ঠপুত্র নাসিরুদ্দিন মহম্মদ স্মৃতির উদ্দেশ্যে তিনি দিল্লিতে প্রথম ইসলামি দরগা স্থাপন করেন।

➤ দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে তিনি দাস বংশের শাসন করেছিলেন।


রুকনুদ্দিন ফিরোজ শাহ (১২৩৬ খ্রী.)

➤ ১২৩১ সালে ইলতুৎমিস তাঁর কন্যা রাজিয়াকে তাঁর উত্তরাধিকারী মনোনীত করেন। 

➤ কিন্তু ইলতুৎমিসের মৃত্যুর পর পুত্র রুকনুদ্দিন ফিরোজ শাহ সিংহাসনে বসেন।

সুলতানা রাজিয়া (১২৩৬-১২৪০খ্রী.)

➤ ১২৩১ সালে ইলতুৎমিস তাঁর কন্যা রাজিয়াকে উত্তরাধিকারী মনোনীত করেন।

➤ রাজিয়াকে উত্তরাধিকারী হিসেবে মনোনীত করলেও ইলতুৎমিসের মৃত্যুর পর অভিজাতরা এবং শাহতুরকান নামে ইলতুৎমিসের এক পত্নী তাঁর পুত্র রুকনুদ্দিন ফিরোজকে সিংহাসনে বসিয়ে দেন।

➤ রুকনুদ্দিন ফিরোজ পাঞ্জাবের বিদ্রোহী ইকতাদার কবির খানের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করলে রাজিয়া সেই সুযোগে সিংহাসন দখল করেন এবং তাঁর ভাইকে হত্যা করে ১২৩৬ সালে সিংহাসনে বসেন । 

➤ একমাত্র নারী হিসাবে দিল্লির সিংহাসনে বসেন রাজিয়া।

➤ সুলতানা রাজিয়া ছিলেন দিল্লির প্রথম ও শেষ মহিলা সুলতান।

➤ রাজিয়া চল্লিশ চক্র বা বন্দেগান-ই-চাহেলগান নামে পরিচিত অন্যায়ভাবে ক্ষমতা ভোগকারী তুর্কি অভিজাতদের ক্ষমতা খর্ব করার চেষ্টা করেছিলেন।

➤ ১২৪০ সালে কৈথালের কাছে কিছু ডাকাত রাজিয়া ও তাঁর স্বামী আলতুনিয়াকে হত্যা করেন। 


মুইজউদ্দিন বাহারাম শাহ (১২৪০-১২৪২ খ্রী.)

➤ ১২৪০ সালে বাহারাম শাহ সিংহাসনে বসেন।

➤ তিনি মালিকনায়েব বা নায়েবি মামলাকত পদ সৃষ্টি করেন।

➤ ১২৪২ সালে লাহোরে মঙ্গল আক্রমণের সময় বাহারাম শাহকে অরক্ষিত অবস্থায় পেয়ে তাঁর শত্রুরা তাঁকে বন্দি ও হত্যা করেন।

আলাউদ্দিন মামুদ শাহ (১২৪২-১২৪৬ খ্রী.)

➤ রুকনুদ্দিন ফিরোজ শাহের পুত্র ১২৪২ সালে দিল্লির সিংহাসনে বসেন।

➤ চল্লিশ চক্রের প্রধান বলবন, নাসিরুদ্দিন মামুদ শাহের মা মালিক-ই-আহানের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে মামুদ শাহকে সিংহাসনচ্যুত করে বন্দি করেন।


নাসিরুদ্দিন মামুদ শাহ (১২৪৬-১২৬৬ খ্রী.)

➤ নাসিরুদ্দিন মামুদ শাহ দরবেশ সুলতান নামে পরিচিত ছিলেন।

➤ ১২৫৩ সালে রৈহন নামে এক হিন্দুস্থানি মুসলমান নাসিরুদ্দিন মামুদকে পরামর্শ দেন গিয়াসউদ্দিন বলবনকে নাগাউর বা হানসি প্রদেশ বদলি করার। কিন্তু বলবনের অনুগামীরা সুলতানকে রাজি করান রৈহানকে বদায়ুনে পাঠিয়ে বলবনকে দিল্লিতে ফিরিয়ে আনতে।

➤ নাসিরুদ্দিনের সময় মঙ্গল নেতা হলাগু পাঞ্জাব দখল করেন। তাঁর সঙ্গে বলবন সন্ধি করেন।

➤ ইসামির ‘ফতাউস সালাতিন' গ্রন্থ থেকে জানা যায় নাসিরুদ্দিন শাহকে বন্দি করে গিয়াসউদ্দিন বলবন দিল্লির সিংহাসন দখল করেন।

➤ নাসিরুদ্দিন মামুদ ছিলেন ইলতুৎমিস বংশের শেষ সম্রাট।

গিয়াসউদ্দিন বলবন (১২৬৬-১২৮৭ খ্রী.)

➤ তার আসল নাম ছিল উলুঘ খাঁ।

➤ একজন দাস হিসেবে ইলতুৎমিস তাঁকে ক্রয় করেছিলেন।

➤ তিনি ছিলেন চল্লিশ চক্র ক্রীতদাস চক্রের প্রধান নায়ক 

➤ তিনি পারস্যের উৎসব ‘নওরোজ’ চালু করেন।

➤ তিনি মেওয়াটি দস্যুদের দমন করেন।

➤ তিনি বাংলার বিদ্রোহি নেতা তুঘ্রিল খাঁকে দমন করেন। তিনি দাস বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ সুলতান।

➤ তাঁর সময়কালে মোঙ্গল নেতা চেঙ্গিস খান সিন্ধুনদীর তীরে অভিযান চালান।

➤ তিনি বিদ্রোহী, বিশ্বাসঘাতক এবং ডাকাতের বিরুদ্ধে রক্ত এবং লৌহ নীতি গ্রহণ করেছিলেন।

➤ মুঘলদের পরাজিত করে তিনি উলুঘ খাঁ উপাধি পেয়েছিলেন।

➤ তিনি পারসিক দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে দরবারে নানা নিয়মকানুন যথা সিজদা (সিংহাসনের সামনে নতজানু হওয়া) ও পাইবস (সম্রাটের পদযুগল চুম্বন) ও জমিনবস প্রথা প্রচলন করেছিলেন।

➤ তিনি নিজেকে নায়েবি খুদায় বা খালিফার সহকারী হিসাবে গ্রহণ করেন ।

➤ তিনি ‘জিল্লিলাহ' উপাধি নেন। এর অর্থ আল্লার ছায়া ।

➤ ‘ভারতের তোতাপাখি’ আমির খসরু ছিলেন তাঁর রাজসভার সর্বশ্রেষ্ঠ কবি।

➤ তিনি চাহালগান-ই প্রথা বা চল্লিশ চক্র ভেঙে দিয়েছিলেন।


মুইজউদ্দিন কাইকোবাদ (১২৮৭-১২৯০ খ্রী.)

➤ দিল্লির প্রবীণ কতোয়াল মুইজউদ্দিন কাইকোবাদ ১২৮৭ খ্রী. দিল্লির সিংহাসনে বসেন।

➤ মুইজউদ্দিন কাইকোবাদ তিনি অতিরিক্ত সুরা পানের ফলে পঙ্গু হয়ে যান। ফলে তার শিশুপুত্র কায়ুমর্সকে সিংহাসনে বসান।


কায়ুমর্স (১২৯০খ্রী.)

➤ দাস বংশের শেষ সুলতান হলেন কায়ুমর্স।

➤ জালালউদ্দিন খলজী প্রথমে অসুস্থ কাইকোবাদ এবং পরে কায়ুমর্সকে হত্যা করে খলজী বংশের প্রতিষ্ঠা করেন।

Read More>>>

সাতবাহন বংশ (link)

কাঞ্চির পল্লব বংশ (link)

গৌড়ের বা বাংলার স্বাধীন রাজবংশ (link)

সেন রাজবংশ (link)

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad