তুঘলক বংশ (১৩২০-১৪১৪ সাল)
Table Of Content (toc)
গিয়াসউদ্দিন তুঘলক (১৩২০-১৩২৫ খ্রী.)
- তুঘলক বংশের প্রতিষ্ঠাতা হলেন গিয়াসউদ্দিন তুঘলক।
- গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের আসল নাম গাজি মালিক।
- খসরু শাহকে হত্যা করে গিয়াসউদ্দিন তুঘলক নাম নিয়ে তিনি সিংহাসনে বসেন। তিনি প্রথম জলসেচ ব্যবস্থার প্রচলন করেন।
- তিনি ছিলেন একজন তুর্কি দাস।
- তুঘলকাবাদ শহরের প্রতিষ্ঠা করেন।
- মন্ডপ ভেঙে পড়ে গিয়ে গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের মৃত্যু হয়।
মহম্মদ-বিন-তুঘলক (১৩২৫-১৩৫১ খ্রী.)
- গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের পুত্র হলেন মহম্মদ-বিন-তুঘলক।
- মহম্মদ-বিন-তুঘলকের আসল নাম জুনা খাঁ।
- দিল্লির এই সুলতান ইতিহাসে পাগলা রাজা নামে পরিচিত।
- তিনি যুক্তিবিদ্যা, দর্শন, গণিত, হস্তবিদ্যা এবং রসায়ন বিজ্ঞানের পারদর্শী ছিলেন। চিকিৎসাশাস্ত্রে জ্ঞানী ছিলেন।
- তিনি একজন পারদর্শী হস্তশিল্পী ছিলেন।
- তিনি পার্সি, আরবি, তুর্কি এমনকী সংস্কৃতেও পারদর্শী ছিলেন।
- তিনিই প্রথম ইবন বতুতাকে কাজী নিয়োগ করেন এবং দূত হিসাবে চীনে প্রেরন করেন।
- পিতল বা তামার মুদ্রাকে রূপা অথবা সোনাতে রূপান্তরিতে করে কোষাগারে ফিরিয়ে আনতে টোকেন মুদ্রা চালু করেন। কিন্তু তাতে কোষাগারের প্রচুর লোকসান হয়।
- দিল্লিকে পরিবর্তন করে তিনি দেবগিরিকে রাজধানী করেন (১৩০৬-১৩২৭ সাল)। নাম পরিবর্তন করে রাখেন দৌলতাবাদ। তাঁর এই পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ায় তিনি পুনরায় দিল্লিকে রাজধানী করেন। তিনি ১৩৩৫-১৩৩৬ সালে দোয়াব অঞ্চলে কর বাড়ান।
- কৃষি উন্নতি ও পতিত জমি উদ্ধার করার জন্য আমির-ই-কোহি নামে একটি কৃষি বিভাগ তৈরি করেন। তিনি কৃষকদের সোন্ধার তাকাভির ঋণ দেন।
- তিনি ‘দেওয়ানি শিয়াশত' নামে এক প্রকার পদ সৃষ্টি করেন, যাঁদের কাজ ছিল দুর্নীতিগ্রস্ত অফিসারদের শাস্তি দেওয়া ।
- তিনি ১৩৩২-১৩৩৩ সালে খোরাশান জয়ের পরিকল্পনা করেন। খোরাশান ও ইরাক জয়ের জন্য তিনি ৩ লক্ষ ৭০ হাজার সেনার একটি বাহিনী তৈরি করেন।
- বিখ্যাত মরক্কোর পর্যটক, ইবন বতুতা তাঁর শাসনকালে ভারত পরিদর্শন করেন।
- তিনিই প্রথম ভারতীয় শাসক যিনি কৃষিকাজের উন্নতির জন্য একটি সুসংহত নীতির প্রবর্তন করেন।
- ১৩৫১ খ্রী. সিন্ধুর থাট্টা অঞ্চলে তাঁর মৃত্যু ঘটে।
ফিরোজ শাহ তুঘলক (১৩৫১-১৩৮৮ খ্রী.)
- মহম্মদ-বিন-তুঘলকের মৃত্যুর পর ৪৬ বছর বয়সে ফিরোজ শাহ তুঘলক সিংহাসনে বসেন।
- তিনি নিজেকে খালিফার ভৃত্য বলে ঘোষণা করেন।
- তিনি পূর্ব প্রবর্তিত দাগ ও হুলিয়া প্রথা বিলুপ্ত করেন।
- গিয়াসউদ্দিন তুঘলক তাঁকে ‘নায়েবি আমির হাজিব’ এবং ‘নায়েব বরবক' উপাধি দেন।
- তাঁকে সুলতান যুগের আকবর বলা হত।
- তিনি ২৩ প্রকার কর বাতিল করে ৪ প্রকারের (খরজ, খামস, জাকাব ও জিজিয়া) কর আদায় করতেন। তিনি জল কর, হাক-ই-সার্ব চালু করেন।
- তিনি কৃষি ঋণ তুলে দেন।
- তিনি দাস কেনাবেচা প্রথা নিষিদ্ধ করে দেন। ক্রীতদাসদের দেখাশোনার জন্য ‘দেওয়ানি বন্দেগান’ নামে একটি দপ্তর গঠন করেন।
- বিনামূল্যে চিকিৎসার জন্য ‘দার-উল-সিফা’ ও ‘দেওয়ানি খয়রত’ নামে দাতব্য বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বেকারদের চাকরির জন্য কর্মবিনিয়োগ কেন্দ্র এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জ স্থাপন করেন।
- খাল খননের জন্য তিনি বিখ্যাত। তিনি আলাউদ্দিন খলজির ‘হাউস-ই-ইনাহি’ও ইলতুৎমিসের ‘হাউস-ই-সামসি’ খাল দুটি সংস্কার করেন।
- তিনি জানপুর, ফিরোজপুর, ফিরোজশাহ এবং হিসার-ফিরোজা সহ বিভিন্ন শহরের প্রতিষ্ঠাতা।
- তিনি সেনাবাহিনী থেকে দাগ ও হুলিয়া প্রথা তুলে দেন।
- ১৩৬৮ সালে বাজদ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া কুতুব মিনারের উপরের দু'টি তলা তিনি পুনর্নির্মাণ করেন। দিল্লিতে ত্রিমূর্তি ভবন কমপ্লেক্স অবস্থিত তাঁর শিকারি ঘর শিকার্য ‘কুশাক মহল’ নামে পরিচিত। দিল্লিতে তুঘলক রোড তাঁর নাম অনুসারে নির্মিত হয়।
- তাঁর আত্মজীবনীটি হল ফুতুহাত-ই-ফিরোজশাহী।
- তোপারা ও মিরাট অঞ্চল থেকে তিনি দুটি অশোক স্তম্ভ দিল্লিতে নিয়ে আসেন।
দ্বিতীয় গিয়াসউদ্দিন তুঘলক বা শাহ তুঘলক (১৩৮৮-১৩৯৪ সাল)
- দ্বিতীয় গিয়াসউদ্দিন তুঘলক শাহের আসল নাম তুঘলক শাহ। তিনি ফতে খানের পুত্র ছিলেন।
- তিনি তার রাজ্যের আমির ওমরাহদের ষড়যন্ত্রে নিহত হন।
নাসিরুদ্দিন মামুদ শাহ (১৩৯৪- ১৪১২ সাল)
- তুঘলক বংশের শেষ সুলতান ছিলেন নাসিরুদ্দিন মামুদ শাহ।
- তাঁর সময়কালে তৈমুর লঙ ভারত আক্রমণ করে। এই যুদ্ধে নাসিরুদ্দিন মামুদ
- শাহ পরাজিত হন। এই সময় দিল্লিতে তৈমুর লঙ ব্যপক অত্যাচার ও লুন্ঠন করেন।
- ১৪১২ সালে নাসিরুদ্দিন মামুদের মৃত্যুর পর দৌলত খাঁ দিল্লির সিংহাসনে বসেন।
- দৌলত খাঁকে পরাজিত করে খিজির খাঁ সৈয়দ বংশের প্রতিষ্ঠা করেন।
________________________________________________
- সাতবাহন বংশ সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন
- কাঞ্চির পল্লব বংশ সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন
- দাস (slave) বংশ সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন
- গৌড়ের বা বাংলার স্বাধীন রাজবংশ সম্পর্কে জানুন।
- সৈয়দ বংশ এবং লোদি বংশ সম্পর্কে জানুন।