গৌতম বুদ্ধ ও বৌদ্ধধর্ম | বৌদ্ধধর্মের মূলনীতি : আর্যসত্য ও অষ্টাঙ্গিক মার্গ | বৌদ্ধধর্ম গ্রন্থ | বৌদ্ধধর্ম সম্মেলন


Buddhism established details in Bengali

গৌতম বুদ্ধ ও বৌদ্ধধর্ম সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

খ্রীস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে ভারতে প্রচলিত বৈদিক ধর্মের বিরুদ্ধে প্রচলিত ধর্মমতগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল বৌদ্ধধর্ম। এখানে গৌতম বুদ্ধ ও বৌদ্ধধর্ম  সম্পর্কে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি তুলে ধরা হয়েছে। যে কোন প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষায় এখান থেকে প্রশ্ন আসবেই। নিম্নে বৌদ্ধধর্ম সম্পর্কে আলোচনা করা হল।

Table Of Content (toc)

  • বৌদ্ধধর্মের প্রবর্তক— গৌতম বুদ্ধ।
  • গৌতম বুদ্ধের জন্ম— খ্রিস্টপূর্ব ৫৬৩, মতান্তরে খ্রিস্টপূর্ব ৫৬৫। 
  • গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান— নেপালে কপিলাবস্তুর লুম্বিনি উদ্যান। 
  • গৌতম বুদ্ধের পিতার নাম— শুদ্ধোদন (শাক্য বংশের রাজা)। 
  • গৌতম বুদ্ধের মাতার নাম— মায়াদেবী।
  • গৌতম বুদ্ধের পত্নীর নাম— যশোধরা। 
  • গৌতম বুদ্ধের পুত্রের নাম— রাহুল। 
  • গৌতম বুদ্ধের মাসির নাম— গৌতমী।
  • গৌতম বুদ্ধের জন্মকালীন নাম— সিদ্ধার্থ। 
  • গৌতম বুদ্ধের ঘোড়ার নাম— কণ্ঠক।
  • গৌতম বুদ্ধের দীক্ষাগুরুর নাম— আলারা কামা মতান্তরে আরাদ কালামা।
  • গৌতম বুদ্ধের বোধিজ্ঞান লাভের স্থান— মগধের কাছে বুদ্ধগয়ার উরুবিল্ব নামক স্থান ।
  • গৌতম বুদ্ধ দিব্যজ্ঞান লাভ করেছিলেন— ৩৫ বছর বয়সে।
  • যে গাছের নীচে বোধিজ্ঞান লাভ করেছিলেন— অশ্বত্থ গাছ।
  • প্রথম ধর্মোপদেশ দিয়েছিলেন- বারাণসীর কাছে ঋষিপত্তনে বা সারনাথে।
  • গৌতম বুদ্ধের প্রথম পাঁচ শিষ্য হলেন— বপ্য, ভদ্রিয়, অশ্বজিৎ, মহানাম ও কৌন্ডিণ্য।
  • মগধের যে রাজা প্রথম তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিলেন— বিম্বিসার।
  • তিনি যে ভাষায় ধর্মপ্রচার করতেন— প্রাকৃত বা অর্ধমাগধী প্রাকৃত ভাষা।
  • তাঁর দীক্ষিত প্রথম সন্ন্যাসিনী— গৌতমী।
  • বুদ্ধদেবের গোত্র— গৌতম৷
  • তাঁর মহাপরিনির্বাণ (দেহত্যাগ) ঘটেছিল– ৪৮৩ মতান্তরে ৪৮৭ খ্রিঃপূঃ।
  • যে স্থানে মহাপরিনির্বাণ ঘটেছিল— কুশীনগরে
  • বৌদ্ধদের ধর্মগ্রন্থের নাম— ত্রিপিটক (পালিভাষায় লিখিত)। 
  • বৌদ্ধধর্মের প্রধান উপদেশগুলি হল— আর্যসত্য, অষ্টাঙ্গিক মার্গ। 
  • গৌতম বুদ্ধের চিকিৎসা করেছিলেন— জীবক চিন্তামণি।
  • গৌতম বুদ্ধ শেষ উপদেশ দিয়েছিলেন— সুভদ্রা নামে এক সন্ন্যাসিনী এবং তাঁর প্রিয় শিষ্য আনন্দ-কে।
  • বুদ্ধের আশীর্বাদধন্য গণিকা মহিলা – আম্রপালি মতান্তরে অম্বাপালি৷ 
  • উপসনা গৃহের নাম— চৈত্য।
  • মহাসঙ্ঘিকা সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা— মহাকাশ্য।
  • গৌতম বুদ্ধের জন্মের প্রতীক— পদ্ম ও ষাঁড়। 
  • গৌতম বুদ্ধের মহাভিনিষ্ক্রমণের প্রতীক— ঘোড়া।
  • গৌতম বুদ্ধের নির্বাণ লাভের প্রতীক— বোধিবৃক্ষ।
  • গৌতম বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণ লাভের প্রতীক— স্তূপ

বৌদ্ধধর্মের মূলনীতি : 

১। আর্যসত্য 

গৌতম বুদ্ধ মানুষের কর্মফল ও তার পরিণাম সম্পর্কে চারটি সত্য উপলব্ধি করেছিলেন যা আর্যসত্য নামে পরিচিত। এগুলি হল- (১) মানুষের জীবনে দুঃখ আছে; জন্মই দুঃখের কারণ (২) মানুষের জীবনে দুঃখেরও কারণ আছে তা হল কামনা, বাসনা, আসঙ্গ লিপ্সা, তৃষ্ণা ও আসক্তি (৩) মানুষের কামনা, বাসনা, আসক্তি নিরোধের উপায় আছে (৪) দুঃখ নিরোধের জন্য সঠিক পথ অনুসরণ করতে হবে।

২। অষ্টাঙ্গিক মার্গ

গৌতম বুদ্ধ আসক্তি বিনাসের জন্য যে অষ্টপথ বা মার্গের কথা বলেছেন তাই অষ্টাঙ্গিক মার্গ। এই ৮টি মাৰ্গ হল (১) সৎ বাক্য (২) সৎকার্য (৩) সৎ জীবন বা জীবিকা (৪) সৎ চেষ্টা (৫) সৎ চিন্তা (৬) সৎ চেতনা (৭) সৎ সংকল্প (৮) সৎ দর্শন বা সম্যক সমাধি। 


বৌদ্ধধর্ম গ্রন্থ

গৌতম বুদ্ধ তাঁর উপদেশগুলি প্রাকৃত বা অর্ধমাগধী প্রাকৃত ভাষায় প্রচার করেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর উপদেশগুলি সংকলন করে পালি ভাষায় ত্রিপিটক বা তিনটি পিটকে সংকলিত করা হয়। রাজগৃহে বুদ্ধের শিষ্যরা সমবেত হয়ে এই সংকলন করেছিলেন। তিনটি পিটক হল— (১) বিনয় পিটক (২) সুত্ত পিটক (৩) অভিধর্ম পিটক।

বৌদ্ধধর্ম সম্মেলন

প্ৰথম সম্মেলন 

  • সম্মেলনের স্থান- রাজগৃহ
  • সম্মেলনের সময়কাল- খ্রিস্টপূর্ব ৪৮৩ (মতান্তরে খ্রিস্টপূর্ব ৪৮৬)
  • সভাপতি- মহাকাশ্যপ
  • সময়কালীন রাজা - অজাতশত্রু
  • উল্লেখযোগ্য বিষয় - এই সম্মেলনে উপালি ত্রিপিটকের প্রথম অংশটি পাঠ করেন। প্রথম অংশ বিনয়পিটক-এ রয়েছে অনুশাসন দ্বিতীয় সূত্রপিটকে বুদ্ধদেবের মহান উপদেশগুলির সংগ্রহ, যা মতবাদের রীতি আকারে সুত্রপিটকে সংগৃহীত।

দ্বিতীয় সম্মেলন

  • সম্মেলনের স্থান- বৈশালী
  • সম্মেলনের সময়কাল- খ্রিস্টপূর্ব ৩৮৩ (মতান্তরে খ্রিস্টপূর্ব ৩৮৭)
  • সভাপতি- মহাস্থবিরযশ
  • সময়কালীন রাজা - কালাশোক
  • উল্লেখযোগ্য বিষয় - এটি হল বৈশালীতে দ্বিতীয় বৃহত্তম সম্মেলন। এই সম্মেলনে বুদ্ধের অনুগামীরা দুটি ভাগে বিভক্ত হল- (১) স্থবিরবাদী (২) মহাসংঘিকা।

তৃতীয় সম্মেলন

  • সম্মেলনের স্থান- পাটলিপুত্র  
  • সম্মেলনের সময়কাল- খ্রিস্টপূর্ব ২৫১
  • সভাপতি- মোগালীপুত্ত তিস্স
  • সময়কালীন রাজা - অশোক
  • উল্লেখযোগ্য বিষয় - এই সম্মেলনে স্থবিরবাদী বৌদ্ধ অনুগামীদের প্রাচীন বলে মানা হয় । এই সম্মেলনে ত্রিপিটকের তৃতীয় পাঠ কথাভাত্তু অভিধর্ম পিটক, যা বৌদ্ধধর্মের মনস্তত্ত্ব ও দর্শনের ব্যাখ্যা দেয়।

চতুর্থ সম্মেলন

  • সম্মেলনের স্থান- কাশ্মীর
  • সম্মেলনের সময়কাল- খ্রিস্টীয় প্রথম শতক
  • সভাপতি- বসুমিত্র
  • সময়কালীন রাজা - কণিষ্ক
  • উল্লেখযোগ্য বিষয় - এই সম্মেলনে বৌদ্ধধর্ম দুটি ভাগে বিভক্ত হয়। একটি হল মহাযান ও অন্যটি হীনযান।

পঞ্চম সম্মেলন

  • সম্মেলনের স্থান- মান্দালয় (বার্মা)
  • সম্মেলনের সময়কাল- ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দ
  • সভাপতি- জগারাভিভামসা, নরিন্দাভিদার্জ ও সুমঙ্গলামি
  • সময়কালীন রাজা - মিন্দন
  • উল্লেখযোগ্য বিষয় - এই সভার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল স্থবিরবাদী বৌদ্ধধর্মের সমস্ত বিষয়বস্তু পালিভাষায় পাঠ করার বিষয় সমস্ত বৌদ্ধ ভিক্ষুদের শিক্ষিত করে তোলে। এই সম্মেলনে প্রায় ২,৪০০ বৌদ্ধভিক্ষু উপস্থিত ছিলেন। 


________________________________________________

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad