table of content (toc)
কোশের সংজ্ঞা:
প্রত্যেক জীবদেহ কোশ দিয়ে তৈরি এবং কোশ হল জীবের গঠনমূলক এবং ক্রিয়ামূলক একক। প্রতিটি কোশ প্রোটোপ্লাজম নামে জেলির মতো একরকম পিচ্ছিল সজীব পদার্থ দিয়ে তৈরি-যা প্রোটোপ্লাজমকে বেষ্টন করে থাকে, একটি অর্ধভেদ্য আবরণ বা পর্দা, অর্থাৎ কোশপর্দা। সুতরাং- অর্ধভেদ্য আবরণ পরিবেষ্টিত এবং প্রোটোপ্লাজম দ্বারা গঠিত জীবদেহের গঠনগত ও কার্যগত একককে কোশ বা সেল বলে।
জীবদেহের গঠনে কোশের অবস্থান একক সত্তা হিসেবে প্রতীয়মান হলে ১৮৩৮-১৮৩৯ সালে ম্যাথিয়াস জে. স্লেইডেন ও থিওডর সোয়ান কোশতত্ত্ব প্রবর্তন করেন।
কোশের আদর্শ সংজ্ঞা:
প্রভেদক ভেদ্য আবরণীবেষ্টিত প্রোটোপ্লাজম দিয়ে গঠিত স্ব-প্রজননশীল জীবদেহের গঠনমূলক ও জৈবনিক ক্রিয়ামূলক একককে কোশ বলে।
কোশের আয়তন:
- জীবদেহের আকার ও আয়তন যেমন ভিন্ন তেমনি বিভিন্ন কোশের আয়তনও ভিন্ন প্রকৃতির হয়।
- জীবজগতের মধ্যে সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্রতম জীব হল মাইকোপ্লাজমা গ্যালিসেপটিকাম এবং মাইকোপ্লাজমা লেডলাই (ব্যাকটেরিয়াসদৃশ জীব)-এদের ব্যাস মাত্র 0.1µm।
- সবচেয়ে বড়ো আয়তনের প্রাণীকোশ হল উটপাখির ডিম, খোলক সমেত ব্যাস 170 মিমি × 135 মিমি।
- এককোশী সর্বাপেক্ষা বড়ো উদ্ভিদকোশ হল অ্যাসিটাবুলেরিয়া নামে একরকমের শৈবাল, যার দৈর্ঘ্য হল 5-10 সেন্টিমিটার।
- বহুকোশী উদ্ভিদের মধ্যে র্যামি নামক গাছের বাকলের একটি তম্ভর (একটি কোশ) দৈর্ঘ্য প্রায় 55 সেন্টিমিটার হয়।
- মানবদেহের ক্ষুদ্রতম কোশ হল লিম্ফোসাইট নামক (7.5µ) শ্বেতকণিকা।
- দীর্ঘতম কোশ হল স্নায়ুকোশ, দৈর্ঘ্য প্রায় 90 সেমি থেকে 1 মিটার পর্যন্ত হয়।
- খালি চোখে দেখা যায় যে উদ্ভিদকোশ- অ্যাসিটাবুলেরিয়া, 5-10 সেমি।
- খালি চোখে দেখা যায় যে প্রাণীকোশ- পাখির ডিম।
- ছোটো জীব- মাইকোপ্লাজমা গ্যালিসেপটিকাম।
- বড়ো উদ্ভিদ- ইউক্যালিপ্টাস- উচ্চতা 122 মিটার (প্রায়)।
- বড়ো প্রাণী- নীল তিমি, 33 মিটার।
- সবচেয়ে লম্বা প্রাণী- রিবন ওয়ার্ম, প্রায় 54 মিটার লম্বা।
কোশের সংখ্যা:
কয়েকপ্রকার এককোশী জীব ছাড়া সমস্ত বহুকোশী জীবদের দেহে অসংখ্য কোশ থাকে। নিম্নশ্রেণির বহুকোশী জীবের কোশের সংখ্যা কয়েকশো থেকে কয়েক হাজার পর্যন্ত হয়, আবার উচ্চশ্রেণির বহুকোশী জীবের কোশের সংখ্যা কয়েক লক্ষ থেকে কয়েক কোটি পর্যন্ত হতে পারে। একজন 80 kg ওজনবিশিষ্ট প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষমানুষের দেহের কোশের সংখ্যা আনুমানিক 6 লক্ষ কোটি থেকে 10 লক্ষ কোটি (60 × 1015)।
কোশের পরিমাপের একক:
কোশের পরিমাপের জন্য যেসব একক ব্যবহার করা হয় সেগুলি হল যথাক্রমে মাইক্রন (μ), মিলিমাইক্রন (mu) এবং অ্যাংস্ট্রম (Å)। বর্তমানে মাইক্রনকে মাইক্রোমিটার এবং মিলিমাইক্রনকে ন্যানোমিটার দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
প্রাণী কোশের বিভিন্ন অংশ:
প্রাণী কোশের বিভিন্ন অংশ গুলি হল-
1. কোশ পর্দা
2. সাইটোপ্লাজম
2.a) সাইটোপ্লাজমীয় ধাত্র
2.b) সাইটোপ্লাজমীয় কঙ্কাল
2.c) এন্ডোমেমব্রেন তন্ত্র
2.d) পর্দাবৃত অঙ্গাণু
2.e) মাইক্রোটিউবিউলার অঙ্গাণু
3. নিউক্লিয়াস
3.a) নিউক্লীয় পর্দা
3.b) ক্রোমাটিন
3.c) নিউক্লিওলাস
3.d) নিউক্লিওপ্লাজম
4. কোশ-অঙ্গাণু
4.a) মাইটোকন্ড্রিয়া
4.b) রাইবোজোম
4.c) লাইসোজোম
4.e) গলগি বস্তু
4.f) সেন্ট্রোজোম
5) মেটাপ্লাস্টিক বডিস
5.a) গ্লাইকোজেন দানা
5.b) চর্বি বটিকা
5.c) জাইমোজেন দানা
উদ্ভিদ কোশের বিভিন্ন অংশ:
উদ্ভিদ কোশের বিভিন্ন অংশ গুলি হল-
1. কোশ আবরক
1.a) কোশপ্রাচীর
1.b) কোশপর্দা
2. সাইটোপ্লাজম
3. নিউক্লিয়াস
3.a) নিউক্লীয় পর্দা,
3.b) ক্রোমোটিন,
3.c) নিউক্লিওলাস,
3.d) নিউক্লিওপ্লাজম
4. কোশ-অঙ্গাণু
4.a) প্লাসটিড
4.b) মাইটোকন্ড্রিয়া,
4.c) রাইবোজোম,
4.d) ডিকটিওজোম,
4.e) এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকিউলাম
5. অ্যারগ্যাসটিক পদার্থ
5.1. সঞ্চিত পদার্থ
5.1.a) শ্বেতসার দানা
5.1.b) গ্লাইকোজেন
5.1.c) অ্যালিউরোন
5.1.d) ইনিউলিন
5.2 ক্ষরিত পদার্থ
5.2.a) নেটকার
5.2.b) রঞ্জক পদার্থ
5.2.c) মকরন্দ
5.2.d) উৎসেচক
5.3. বর্জ্য পদার্থ
5.3.a) ট্যানিন
5.3.b) গদ
5.3.c) রজন
5.3.d) তরুক্ষীর
5.3.e) ধাতব কেলাস
5.3.f) জৈব অ্যাসিড,
5.3.g) উপক্ষার