Header ad

ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার ও গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলির ব্যাখ্যা।

ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার

 🕌 **ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার – প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক অধিকার** 🕌

এখানে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে “ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার” (Right to Freedom of Religion), যা ভারতীয় সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক অধিকারগুলির মধ্যে অন্যতম। প্রতিটি নাগরিকের ধর্ম পালনের স্বাধীনতা, প্রচার এবং ধর্মীয় আচরণ সম্পর্কে সংবিধানের যে সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে, তা Article 25 থেকে 28 পর্যন্ত বর্ণিত। এই অধিকার শুধুমাত্র ব্যক্তিগত স্বাধীনতার প্রতীক নয়, বরং ভারতীয় গণতান্ত্রিক কাঠামোর একটি মূল স্তম্ভ।

📘 **এই টপিকে যা থাকছে**:

  • Article 25, 26, 27, ও 28-এর ব্যাখ্যা
  • ধর্মীয় স্বাধীনতার সীমাবদ্ধতা ও ব্যতিক্রম
  • গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় ও উদাহরণ
  • ধর্মীয় স্বাধীনতার মন:স্তাত্বিক দিক

table of content (toc)

ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার (Right to Freedom of Religion)

  • হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, পারসি প্রভৃতি ধর্মের মানুষ যুগ যুগ ধরে ভারতে বসবাস করছে। ব্রিটিশরা ভারতকে নিজেদের পদানত রেখে শোষণ করার জন্য 'বিভক্ত করে শাসন করো' নীতি অনুসরণ করেছিল। 
  • ফলে হিন্দু মুসলমান দুটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষের মনে বিদ্বেষ বৃদ্ধি পায় এবং শেষ পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ চরম আকার ধারণ করলে ভারত দ্বিখণ্ডিত হয়; জন্মলাভ করে ভারত এবং পাকিস্তান নামে দৃটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র। কিন্তু পাকিস্তান ধর্মীয় রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও ভারত 'ধর্মনিরপেক্ষ' রাষ্ট্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে।

25 নং ধারা: সকল ব্যক্তিই সমানভাবে অনুসারে ধর্মস্বীকার, স্বাধীনতা ভোগ করবে। বিবেকের স্বাধীনতা ধর্মাচরণ এবং ধর্মপ্রচারের

26 নং ধারা: প্রত্যেক ধর্মীয় সম্প্রদায় বা সংগঠন ও কার্যাদি গোষ্ঠী নিজের ধর্মীয় পরিচালনা করতে পারবে।

27 নং ধারা: ধর্মীয় কারণে কোনো করা যাবে না। ব্যক্তিকে কর দিতে বাধ্য

28 নং ধারা: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় শিক্ষার ক্লাসে ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণের বিষয়টি তাদের ইচ্ছাধীন।

ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের অর্থ: 

ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হলেও মূল সংবিধানের কোথাও ভারতকে 'ধর্মনিরপেক্ষ' রাষ্ট্র বলে বর্ণনা করা হ্যানি। ১৯৭৬ সালে ৪২তম সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে প্রস্তাবনায় 'ধর্মনিরপেক্ষ' কথাটি সংযোজন করা হয়েছে। 'ধর্মনিরপেক্ষ' রাষ্ট্র বলতে কী বোঝায়, তা বলতে গিয়ে অনন্তসায়নম্ আয়েঙ্গার গণপরিষদে মন্তব্য করেছিলেন, 'ধর্মনিরপেক্ষ' বলতে একথা বোঝায় না যে, কোনো ধর্মের প্রতি আমাদের বিশ্বাস নেই এবং আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এর সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। 'ধর্মনিরপেক্ষ' কথাটির অর্থ হল-রাষ্ট্র কোনো বিশেষ ধর্মকে সাহায্য করবে না বা এক ধর্ম অপেক্ষা অন্য ধর্মকে প্রাধান্য দেবে না। সুতরাং ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে সব ধর্মকে সমান মর্যাদা প্রদান করাকে বোঝায়। রাধাকৃষ্ণণ-এর মতে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র বলতে অধার্মিক, ধর্ম-বিরোধী কিংবা ধর্ম বিষয়ে উদাসীন রাষ্ট্রকে বোঝায় না। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হল এমন একটি রাষ্ট্র, যা ব্যক্তি ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলির ধর্মীয় স্বাধীনতা স্বীকার করে, নাগরিক হিসেবে 'গণ্য করে এবং যা সাংবিধানিকভাবে বিশেষ কোনো ধর্মের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করে না কিংবা বিশেষ কোনো ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা বা বিরোধিতা করে না। এক কথায় বলা যায়, ধর্ম বিষয়ে রাষ্ট্র সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থাকে।

ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার ও তার নিয়ন্ত্রণ: 

ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের উপরিউক্ত বৈশিষ্ট্যগুলি মোটামুটিভাবে ভারতে বর্তমান রয়েছে। ভারতীয় সংবিধানের ২৫ থেকে ২৮ নং ধারায় জনগণের ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার স্বীকৃতি লাভ করেছে। প্রত্যেক ব্যক্তির বিবেকের স্বাধীনতা এবং ধর্মস্বীকার, ধর্মপালন ও ধর্মপ্রচারের স্বাধীনতা রয়েছে। [২৫ (১) নং ধারা]। সাধারণভাবে রাষ্ট্র কোনো ধর্মীয় বিষয়ের ওপর হস্তক্ষেপ করতে না পারলেও 

  • (1) জনশৃঙ্খলা, সমাজের স্বীকৃত নীতিবোধ, জনস্বাস্থ্য এবং অন্যান্য মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের প্রয়োজনে রাষ্ট্র এই অধিকারের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারে। 
  • (ii) বিশেষ কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান কোনো ধর্মাচরণের অঙ্গ কি না, তা বিচারবিবেচনা করার ক্ষমতা আদালতের রয়েছে। বস্তুত, ধর্মের নামে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, জনস্বার্থ প্রভৃতি বিঘ্নিত হলে কিংবা নরবলির মতো অমানবিক কার্যাবলি অনুষ্ঠিত হলে অথবা সতীদাহ, দেবদাসী প্রথার মতো নীতি-বিগর্হিত আচার-অনুষ্ঠান চলতে থাকলে সামগ্রিকভাবে দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি ব্যাহত হবে। তাই, এসব প্রতিরোধ করার জন্য সংগত কারণে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ একান্তভাবে প্রয়োজন। 
  • (iii) সংবিধানে একথাও বলা হয়েছে যে, রাষ্ট্র ধর্মাচরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অর্থনৈতিক, আর্থিক, রাজনৈতিক কিংবা অন্যান্য ধর্মনিরপেক্ষ কার্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। 
  • (iv) সামাজিক কল্যাণসাধন ও সমাজ-সংস্কারের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্র প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নের মাধ্যমে ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকারে হস্তক্ষেপ করাতে সক্ষম। 
  • (v) এমনকী, হিন্দু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে হিন্দু ধর্মাবলম্বী সব ব্যক্তির কাছে উন্মুক্ত করে দেওয়ার জন্য রাষ্ট্র আইন প্রণয়ন করতে পারে। সংবিধানে 'হিন্দু' শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। শিখ, জৈন ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরাও হলেন 'হিন্দু'। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ১৯ (১) (খ) নং ধারায় নিরস্ত্রভাবে সমবেত হওয়ার কথা বলা হলেও শিখ ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রে কৃপাণ ধারণ ও বহনের অধিকার সাংবিধানিক স্বীকৃতি লাভ করেছে। কারণ, কৃপাণ ধারণ ও বহন শিখ ধর্মাচরণের অপরিহার্য অঙ্গ বলে বিবেচিত হয়।

কর আদায় নিষিদ্ধকরণ: 

  • কোনো বিশেষ ধর্ম বা ধর্ম-সম্প্রদায়ের প্রসার বা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোনো ব্যক্তিকে কর প্রদানে বাধ্য করা যায় না (২৭ নং ধারা)। কিন্তু মন্দির দর্শন, দেবপূজা ইত্যাদি ব্যাপারে রাষ্ট্র কর ধার্য করার পরিবর্তে বৃত্তি বা অনুদান ধার্য করে সংবিধানের এই বাধা নিষেধটিকে এড়িয়ে যেতে পারে। 

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মশিক্ষাদান নিষিদ্ধকরণ: 

ভারতীয় সংবিধানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে ধর্মীয় শিক্ষাদানের ওপর কিছু কিছু বাধানিষেধ আরোপ করা হয়েছে। ২৮ নং ধারায় বলা হয়েছে যে-

  • (i) সম্পূর্ণভাবে সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্ম-বিষয়ক শিক্ষাদান করা যাবে না। 
  • (ii) আবার, যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকার কর্তৃক স্বীকৃত কিংবা সরকারি অর্থে আংশিকভাবে পরিচালিত, সেগুলিতেও শিক্ষার্থীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে অথবা অপ্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষার্থীর অভিভাবকের বিনা অনুমতিতে ধর্মশিক্ষা বাধ্যতামূলক করা যাবে না। কিন্তু রাষ্ট্র কর্তৃক পরিচালিত হলেও কোনো দাতা বা অছি-র দ্বারা প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মশিক্ষা দেওয়া যায়, যদি দাতার উইলে কোনো বিশেষ ধর্ম বিষয়ে শিক্ষাদানের কথা উল্লেখ থাকে।

বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলির অধিকার ও তার নিয়ন্ত্রণ: 

ব্যক্তি ছাড়াও ধর্মীয় সম্প্রদায়কে সংবিধানে কতকগুলি অধিকার প্রদান করা হয়েছে। ২৬ নং ধারা অনুসারে প্রতিটি ধর্মীয় সম্প্রদায় বা তার যে-কোনো অংশ (ক) ধর্ম বা দানের উদ্দেশ্যে সংস্থা স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে; (খ) নিজ নিজ ধর্ম-বিষয়ক কার্যকলাপ নিজেরাই। পরিচালনা করতে; (গ) স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি অর্জন ও ভোগদখল করতে এবং (ঘ) আইন অনুসারে সম্পত্তি পরিচালনা করতে পারবে। তবে রাষ্ট্র -

  • (i) জনশৃঙ্খলা, 
  • (ii) নৈতিকতা ও 
  • (iii) জনস্বাস্থ্য রক্ষা করার জন্য যে কোনো ধর্মীয় সম্প্রদায় বা তার অংশের উপরিউক্ত অধিকারগুলিতে হস্তক্ষেপ করতে পারে।
🎯 **উপযুক্ত কীওয়ার্ড**: ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার, Article 25 to 28, মৌলিক অধিকার, Indian Constitution Bengali GK, Right to Religion in Bengali, WBCS GK, SSC GK in Bengali, UPSC polity Bengali **সঠিক প্রস্তুতিতে সাফল্য নিশ্চিত – এখনই পড়া শুরু করুন!** (alert-success)

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Area