⚖️ **সাংবিধানিক প্রতিবিধানের অধিকার – প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক অধিকার** ⚖️
এখানে বিশ্লেষণ করা হয়েছে “সাংবিধানিক প্রতিবিধানের অধিকার” (Right to Constitutional Remedies), যা ভারতীয় সংবিধানের Article 32-এ অন্তর্ভুক্ত একটি শক্তিশালী মৌলিক অধিকার। ডঃ বি. আর. আম্বেডকর একে "সংবিধানের প্রাণ" বলেছিলেন। হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে রিট পিটিশনের ৫টি ধরন যেমন- বন্দি প্রত্যক্ষীকরণ, পরমাদেশ, প্রতিষেধ, অধিকার-পৃচ্ছা এবং উৎপ্রেষণ বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এই অধিকারের মাধ্যমে একজন নাগরিক তাঁর মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হলে সরাসরি সুপ্রিম কোর্ট বা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে পারেন। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাগুলির – যেমন WBCS, UPSC, SSC, RRB – জন্য এই টপিকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
📘 **এই পোস্টে যা থাকছে**:
- Article 32 ও 226-এর ব্যাখ্যা
- হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে রিট পিটিশনের ধরন (Habeas Corpus, Mandamus, Certiorari, Prohibition, Quo-Warranto)
- গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় ও বাস্তব প্রয়োগ
table of content (toc)
সাংবিধানিক প্রতিবিধানের অধিকার (Right to Constitutional Remedies)
সাংবিধানিক প্রতিবিধানের প্রয়োজনীয়তা:
- সংবিধানে কেবল লিপিবদ্ধ করা হলেই যে মৌলিক অধিকারগুলি সুরক্ষিত হবে, এমন কোনো কথা নেই। আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ প্রভৃতি যে-কোনো সময়ে অধিকারগুলি খর্ব করতে পারে। তাই সাংবিধানিক প্রতিবিধানের মাধ্যমে অধিকারগুলি সংরক্ষণের যথাযথ ব্যবস্থা করা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে একান্ত অপরিহার্য। ডঃ আম্বেদকর সাংবিধানিক প্রতিবিধানের অধিকারকে 'সংবিধানের আত্মা ও প্রাণকেন্দ্র' বলে বর্ণনা করেছেন।
আদেশ বা নির্দেশ জারি করে অধিকার সংরক্ষণের ব্যবস্থা:
- ভারতীয় নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলি রক্ষা করার জন্য সাংবিধানিক প্রতিবিধানের অধিকার সংবিধানের ৩২ ও ২২৬ নং ধারায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
- ৩২ নং ধারা অনুযায়ী মৌলিক অধিকারগুলি বলবৎ ও কার্যকর করার জন্য নাগরিকরা সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন করতে পারে। সুপ্রিম কোর্টে এই অধিকারগুলি বলবৎ করার জন্য বন্দি প্রত্যক্ষীকরণ, পরমাদেশ, প্রতিষেধ, অধিকার-পৃচ্ছা এবং উৎপ্রেষণ প্রভৃতি লেখ, নির্দেশ বা আদেশ জারি করতে পারেন।
- অনুরূপভাবে, ২২৬ নং ধারা অনুসারে অঙ্গরাজ্যগুলির হাইকোর্ট আদেশ বা নির্দেশ জারি করে অধিকারগুলি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেন। তাছাড়া, পার্লামেন্ট আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট ছাড়া অন্য যে-কোনো আদালতকে নিজ এক্তিয়ারের মধ্যে পূর্বোক্ত লেখসমূহ জারি করার ক্ষমতা প্রদান করতে পারে। তবে, অদ্যাবধি পার্লামেন্ট এই ধরনের কোনো আইন প্রণয়ন করেনি।
ধারা:
- 31 নং ধারা: ধারাটি বাতিল করা হয়েছে।
- 32 নং ধারা: মৌলিক অধিকারগুলিকে বলবৎ করার জন্য পাঁচটিলেখ বা আদেশ জারী সংক্রান্ত বিষয়াদি।
- 33 নং ধারা: সশস্ত্র বাহিনীর মৌলিক অধিকারসমূহ পার্লামেন্ট আইন প্রণয়নের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।
- 34 নং ধারা: কোনো অঞ্চলে সামরিক আইন বলবৎ থাকাকালীন সময়ে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে মৌলিক অধিকারের উপর বিধিনিষেধ আরোপিত হতে পারে।
- 35 নং ধারা: মৌলিক অধিকারগুলিকে রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন।
আদেশ, নির্দেশ বা লেখ:
সংবিধানে উল্লিখিত আদেশ, নির্দেশ বা লেখগুলি হল
- (১) বন্দি প্রত্যক্ষীকরণ
- (২) পরমাদেশ,
- (৩) প্রতিষেধ,
- (৪) অধিকার-পৃচ্ছা এবং
- (৫) উৎপ্রেষণ।
(১) 'বন্দি প্রত্যক্ষীকরণ' (Habeas corpus):
কথাটির অর্থ বন্দিকে আদালতে সশরীরে হাজির করা। কোনো ব্যক্তিকে আটক করা হলে কী কারণে তাকে আটক করা হয়েছে, তা জানার জন্য সুপ্রিম কোর্ট বা হাইকোর্ট বন্দির আবেদনক্রমে আটককারীর ওপর আদেশ জারি করে বন্দিকে আদালতকক্ষে উপস্থিত করার নির্দেশ দিতে পারেন। আদালত যদি মনে করেন যে, বেআইনিভাবে আবেদনকারীকে আটক করা হয়েছে, তবে আটক ব্যক্তিকে মুক্তিদানের নির্দেশ দিতে পারেন। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, সুপ্রিম কোর্ট কেবল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে 'বন্দি প্রত্যক্ষীকরণ' লেখ জারি করতে পারেন।
কিন্তু হাইকোর্ট রাষ্ট্র এবং ব্যক্তি উভয়ের বিরুদ্ধেই এই লেখ জারি করার অধিকারী। তবে দুটি ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট বা হাইকোর্ট 'বন্দি প্রত্যক্ষীকরণ' লেখ জারি করতে পারেন না, যথা-
- (ক) নিজ এক্তিয়ারের বাইরে কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হলে আদালত এরূপ লেখ জারি করতে অক্ষম এবং
- (খ) ফৌজদারি অপরাধের জন্য কোনো আদালত কর্তৃক হাজতবাসের দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির মুক্তির উদ্দেশ্যে সুপ্রিম কোর্ট বা হাইকোর্ট 'বন্দি প্রত্যক্ষীকরণ' লেখ জারি করার অধিকারী নন।
(২) 'পরমাদেশ' (Mandamus):
- পরমাদেশ শব্দটির অর্থ 'আমরা আদেশ দিচ্ছি' সুপ্রিম কোর্ট বা হাইকোর্ট কোনো অধস্তন আদালত, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে নিজ দায়িত্ব পালনের জন্য পরমাদেশ জারি করতে পারেন।
- এই আদেশ জারি করে আদালত সরকারকে আইনসংগত ও জনস্বার্থ সম্পর্কিত কর্তব্য সম্পাদনে বাধ্য করেন। কিন্তু ভারতের রাষ্ট্রপতি কিংবা কোনো রাজ্যের রাজ্যপালের বিরুদ্ধে পরমাদেশ জারি করার ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্ট বা হাইকোর্টের নেই।
(৩) 'প্রতিষেধ' (Prohibition):
- প্রতিষেধ কথাটির অর্থ 'নিষেধ করা'। এই আদেশ জারি করে ঊর্ধ্বতন আদালত নিম্নতন আদালতকে তাঁদের এক্তিয়ার বহির্ভূত কার্য সম্পাদনে বাধা দিতে পারেন। ঊর্ধ্বতন আদালতের এই নির্দেশ লঙ্ঘন করা হলে লঙ্ঘনকারীকে আদালত অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত করা যেতে পারে।
(৪) 'অধিকার-পৃচ্ছা' (Quo-Warranto):
- অধিকার-পৃচ্ছা-র অর্থ 'কোন্ অধিকারে'। কোনো ব্যক্তি যে পদ অধিকার করে থাকে, সেই পদের জন্য তার দাবি কতখানি যুক্তিসংগত, তা সুপ্রিম কোর্ট বা হাইকোর্ট অধিকার পুচ্ছার মাধ্যমে খতিয়ে দেখেন। দাবিটি অবৈধ বলে মনে করলে আদালত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে পদচ্যুত করার নির্দেশ দিতে পারেন।
(৫) 'উৎপ্রেষণ' (Certiorari)
- উৎপ্রেষণ বলতে 'বিশেষভাবে জ্ঞাত হওয়া' বোঝায়। সুপ্রিম কোর্ট বা হাইকোর্ট কোনো মামলার নিরপেক্ষ বিচার করার জন্য কিংবা অধস্তন আদালতগুলির ক্ষমতা বহির্ভূত কার্যে বাধাদানের উদ্দেশ্যে তাঁদের এই নির্দেশ দিতে পারেন যে, মামলাটি শুনানির জন্য উচ্চ আদালতে প্রেরণ করা হোক। এরূপ আদেশ পৌর প্রতিষ্ঠানগুলির ক্ষেত্রেও প্রযুক্ত হতে পারে।
ব্যতিক্রমসমূহ: সংবিধানের অন্যান্য মৌলিক অধিকারের মতো সাংবিধানিক প্রতিবিধানের অধিকারটিও অবাধ বা নিরঙ্কুশ নয়। এই অধিকারের ব্যতিক্রমগুলি হল:-
- (১) যুদ্ধ, বহিরাক্রমণ কিংবা দেশের মধ্যে সশস্ত্র বিদ্রোহের ফলে সমগ্র দেশ বা তার কোনো অংশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন। এরূপ জরুরি অবস্থা ঘোষিত হলে সংবিধানের ১৯ নং ধারায় বর্ণিত স্বাধীনতার অধিকারগুলি অকার্যকর হয়ে যায়। এমতাবস্থায় আইনসভা যে-কোনো আইন প্রণয়ন করতে এবং শাসন বিভাগ যে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে [৩৫৮ (১) নং ধারা]।
- (২) তা ছাড়া, জরুরি অবস্থার সময় রাষ্ট্রপতি আদেশ জারি করে কেবল ২০ ও ২১ নং ধারায় বর্ণিত অধিকারগুলি ছাড়া অন্যান্য মৌলিক অধিকারকে কার্যকর করার জন্য আদালতে আবেদন করার অধিকার স্থগিত রাখতে পারেন [৩৫৯ (১) নং ধারা]।
- (৩) সশস্ত্র বাহিনীর অথবা জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিযুক্ত অন্যান্য বাহিনীর কিংবা গোয়েন্দা ব্যুরো বা এই ধরনের অন্য সংগঠনের প্রয়োজনে নিযুক্ত টেলি-যোগাযোগ ব্যবস্থার কর্মীদের কর্তব্য সম্পাদন ও শৃঙ্খলা রক্ষা সুনিশ্চিত করার জন্য তারা কতখানি মৌলিক অধিকার ভোগ করতে পারবে, পার্লামেন্ট আইন প্রণয়নের মাধ্যমে তা স্থির করে দিতে পারে [৩৩ নং ধারা]।
- (৪) ভারতের কোনো অঞ্চলে সামরিক শাসন চালু থাকাকালীন কোনো সরকারি কর্মচারী বা অন্য কেউ শৃঙ্খলা রক্ষা বা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য কোনো অবৈধ কাজ করলে পার্লামেন্ট আইন প্রণয়ন করে ওইসব কাজকে বৈধ বলে ঘোষণা করতে পারে। পার্লামেন্ট প্রণীত এরূপ আইনকে 'দণ্ডনিষ্কৃতি আইন' বলা হয়।
🎯 সাংবিধানিক প্রতিবিধানের অধিকার, Article 32 Bengali, মৌলিক অধিকার, রিট পিটিশন বাংলায়, Constitutional Remedies in Bengali, WBCS GK, UPSC polity Bengali, SSC Bengali Constitution GK 📚 **এই ব্লগে রইল পরিষ্কার ব্যাখ্যা ও পরীক্ষাভিত্তিক প্রস্তুতির দিকনির্দেশ – সাফল্যের এক ধাপ কাছাকাছি পৌঁছান আজই!** (alert-success)