ভারতের রাজ্যসভা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলি

Important information of Rajya Sabha

আজকের অলোচ্য বিষয় ভারতের রাজ্যসভা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলি তুলে ধরা হয়েছে। এখানে সেই সব দিক গুলি তুলে ধরা হয়েছে যেগুলি Competitive Exams এবং অন্যান্য পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নে Important information about Rajya Sabha of India সম্পর্কে  আলোচনা করা হল।

বিভিন্ন Competitive Exams -এর প্রস্তুতির জন্য আমাদের এই সাইটে নিয়মিত ভিজিট করবেন। সম্পুর্ন বিনামূল্যে পরীক্ষার প্রস্তুতি দেওয়া হয়  এবং দৈনিক আপডেট পাওয়ার জন্য আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেল যুক্ত হোন। (alert-success)

Table Of Content (toc) 

ভারতের সংসদীয় বা পার্লামেন্টারি শাসন ব্যবস্থা ব্রিটেনের সংসদীয় শাসন ব্যবস্থার রীতি অনুসরণ করে প্রবর্তিত হয়েছে। ভারতের কেন্দ্রীয় আইনসভাকে পার্লামেন্ট বলা হয়। পার্লামেন্ট রাষ্ট্রপতি, লোকসভা ও রাজ্যসভা নিয়ে গঠিত। পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের নাম হল রাজ্যসভা এবং নিম্নকক্ষের নাম হল লোকসভা।

রাজ্যসভার গঠন ও কার্যাবলি :–

  • পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হল রাজ্যসভা।
  • ধারা ৮০ তে রাজ্যসভার গঠনের কথা বলা হয়েছে।  
  • এই ধারা অনুসারে অনধিক ২৫০ জন সদস্য নিয়ে রাজ্যসভা গঠিত হয়। সাহিত্য, বিজ্ঞান, চারুকলা, সমাজসেবা প্রভৃতির ক্ষেত্রে যাঁরা বিশেষ অবদানের পরিচয় রেখেছেন, তাঁদের মধ্য থেকে ১২ জন রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত সদস্য এবং ২৩৮ জন নির্বাচিত সদস্য নিয়ে রাজ্যসভা গঠিত হয়।
  • নির্বাচিত ২৩৮ জন সদস্য রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলসমূহের প্রতিনিধি।
  • ভারতে কেন্দ্রীয় আইনসভা বা সংসদ একটি দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা। সংসদীয় গণতন্ত্রের স্বীকৃত পদ্ধতি অনুসরণ করে কেন্দ্রীয় আইনসভা গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। সংসদীয় গণতন্ত্রে রাষ্ট্রপতি-শাসিত সরকারি ব্যবস্থার ন্যায় ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণের নীতি গ্রহণ করা হয় না। এই ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল, শাসন-বিভাগ এবং আইন-বিভাগের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক।

রাজ্যসভার সদস্যদের নির্বাচনের পদ্ধতি :-

  • রাজ্যসভার সদস্যদের মধ্যে অনধিক ২৩৮ জন পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হবেন।
  • ১২ জন সদস্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত হন।
  • সংবিধানের ৮০ নং ধারা অনুসারে প্রতিটি রাজ্য থেকে রাজ্যসভার সদস্যগণ রাজ্য বিধানসভার নির্বাচিত সদস্যদের দ্বারা একক- হস্তান্তরযোগ্য' সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে নির্বাচিত হন। 
  • কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে রাজ্যসভায় সদস্য নির্বাচনের পদ্ধতি সংসদ-প্রণীত আইনের দ্বারা স্থিরীকৃত হয়।
  • কেন্দ্রশাসিত প্রতিটি অঞ্চল থেকে রাজ্যসভায় তার প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য একটি নির্বাচক সংস্থা গঠনের ব্যবস্থা আছে।
  • রাজ্যসভায় প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, বিধান পরিষদের সদস্যগণ এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন না।তা ছাড়া বিধানসভায় রাজ্যপাল কর্তৃক মনোনীত ইঙ্গ-ভারতীয় সম্প্রদায়ভুক্ত সদস্যদেরও এই ক্ষেত্রে ভোটাধিকার নেই।

রাজ্যসভার সদস্যদের যোগ্যতাবলি :—

  • ভারতের সংবিধানের ৮৪ নং ধারায় রাজ্যসভায় সদস্য নির্বাচিত হবার যোগ্যতাবলি সংযোজিত আছে। তা ছাড়া ১৯৫১ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইন এবং ১৯৮৫ সালের ৫২-তম সংবিধান সংশোধন (আইন) বা দলত্যাগ বিরোধী আইনের মাধ্যমেও সদস্যপদের যোগ্যতা স্থিরীকৃত হয়েছে। 
  • ৮৪ নং ধারা অনুসারে রাজ্যসভায় নির্বাচিত হতে হলে কোনো ব্যক্তিকে অবশ্যই ভারতীয় নাগরিক হতে হবে।
  • ন্যূনতম পক্ষে ৩০ বছর বয়স্ক হতে হবে এবং সংসদ আইন প্রণয়নের মাধ্যমে যে যোগ্যতা স্থির করবে তাঁকে সেই যোগ্যতার অধিকারী হতে হবে।
  • ১৯৫১ সালে প্রণীত জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের মাধ্যমে রাজ্যসভার সদস্যদের যোগ্যতা বিষয়ক নির্দেশিকা হল কোনো রাজ্য থেকে রাজ্যসভার জন্য নির্বাচন প্রার্থীকে সেই রাজ্যের কোনো লোকসভা কেন্দ্রের ভোটদাতা হতে হবে।
  • প্রার্থী কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের অধীনে কোনো লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকতে পারেন না।
  • আদালত কর্তৃক বিকৃত-মস্তিষ্ক বলে ঘোষিত কোনো ব্যক্তি রাজ্যসভার সদস্য নির্বাচিত হবার ক্ষেত্রে অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। 
  • দেউলিয়া বলে ঘোষিত কোনো ব্যক্তি অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। 
  • ভারতীয় নাগরিক নয়, বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছে, এমন ব্যক্তি অথবা বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্যপরায়ণ কোনো ব্যক্তি রাজ্যসভার সদস্যপদের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। 
  • নির্বাচনে দুর্নীতিমূলক ক্রিয়াকলাপ অথবা নির্বাচন সংক্রান্ত অপরাধের জন্য নির্বাচন ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোনো আদালত কর্তৃক অপরাধী ঘোষিত কোনো ব্যক্তি অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
  • কোনো অপরাধমূলক কাজের জন্য দণ্ডিত এবং দু'বছরের অধিককাল কারাবাস করেছে, এমন কোনো ব্যক্তি অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
  • আইনের দ্বারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এবং পদ্ধতি অনুযায়ী নির্বাচনের ব্যয়-সংক্রান্ত হিসাব পেশে ব্যর্থ এমন ব্যক্তি অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
  • দুর্নীতিমূলক ক্রিয়াকলাপ এবং আনুগত্যহীনতার অপরাধে সরকারি চাকুরি থেকে বরখাস্ত কোনো ব্যক্তি অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। 
  • সরকারের সঙ্গে আর্থিক স্বার্থে জড়িত এমন কোনো সংস্থার পরিচালক, লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত কোনো ব্যক্তি এবং সরকারের কোনো কাজ বা প্রকল্প রূপায়ণের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ কোনো ব্যক্তি রাজ্যসভার সদস্যপদের অযোগ্য বলে বিবেচিত হন।
>> Must Read : Daily Online Mock Test 

রাজ্যসভার মেয়াদ :-

  • রাজ্যসভা লোকসভার মতো কোনো অস্থায়ী কক্ষ নয়। লোকসভার মতো রাজ্যসভাকে রাষ্ট্রপতি ভেঙে দিতে পারেন না। 
  • রাজ্যসভা একটি আধা-স্থায়ী কক্ষ। তার সদস্যগণ ছ-বছরের জন্য নির্বাচিত হন। তবে সদস্যদের পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার কোনো বাধা নেই। 
  • রাজ্যসভার মনোনীত সদস্যগণও ছ-বছরের জন্য মনোনীত হন। তবে রাষ্ট্রপতি তাঁদের পুনরায় ছ-বছরের জন্য মনোনীত করতে পারেন। 
  • রাজ্যসভার সদস্যগণের কার্যকালের মেয়াদ একসঙ্গে শেষ হয় না। 
  • এই কক্ষের এক-তৃতীয়াংশ সদস্য প্রত্যেক দু-বছর অন্তর অবসর গ্রহণ করেন। 

রাজ্যসভার বিশেষ ক্ষমতা :-

  • সংবিধান সংশোধনের কোনো প্রস্তাব রাজ্যসভা বা লোকসভা যে কোনো কক্ষেই উত্থাপন করা যায় এবং উভয় কক্ষ কর্তৃক গৃহীত না হলে সংশোধনের জন্য আনীত কোন বিল কার্যকর করা যায় না। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সংবিধান সংশোধন বিল নিয়ে রাজ্যসভা এবং লোকসভার মধ্যে যদি মতানৈক্য দেখা দেয় তবে উভয় কক্ষের কোনো যৌথ সভা আহ্বান করে তা দূর করা যায় কি না, সংবিধানে সে বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি।
  • জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত কোনো ঘোষণা সংসদ কর্তৃক অনুমোদিত না হলে এক মাসের বেশি কার্যকর থাকতে পারে না। ঘোষণার প্রস্তাব অনুমোদনের ক্ষেত্রে উভয় কক্ষের সমান ক্ষমতা। তবে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে লোকসভাকে রাজ্যসভার তুলনায় বেশি ক্ষমতা ন্যস্ত করা হয়েছে। বিভিন্ন কমিশন এবং পদাধিকারীর প্রতিবেদন রাজ্যসভা এবং লোকসভার নিকট পেশ করা হয়।
  • রাজ্যসভা সাধারণ বিল অনুমোদনের ক্ষেত্রে লোকসভার সমান ক্ষমতা প্রয়োগ করে। সাধারণ বিল লোকসভা বা রাজ্যসভা যে-কোনো কক্ষেই উত্থাপন করা যায়। রাজ্যসভা এবং লোকসভার মধ্যে কোনো সাধারণ বিলের বিষয়ে মতানৈক্য সৃষ্টি হলে রাষ্ট্রপতি উভয়কক্ষের একটি যৌথ সভা আহ্বান করেন এবং লোকসভার অধ্যক্ষ সেই সভায় সভাপতিত্ব করেন।
  • আর্থিক বিষয়ে রাজ্যসভার বিশেষ কোনো ক্ষমতা নেই। রাজ্যসভায় বাজেট ও অর্থবিল প্রথমে উত্থাপিত হয় না। রাষ্ট্রপতির পূর্বানুমতি নিয়ে লোকসভায় অর্থবিল উত্থাপিত হয়। লোকসভা কর্তৃক গৃহীত অর্থবিলকে রাজ্যসভার বিবেচনার জন্য প্রেরণ করা হয়। রাজ্যসভা অর্থবিলের ক্ষেত্রে ক্ষমতা বিলপ্রাপ্তির পর থেকে ১৪ দিনের মধ্যে লোকসভার নিকট নিজের সুপারিশ প্রেরণে বাধ্য। যদি তা না করে তবে লোকসভা ধরে নেবে যে, রাজ্যসভা কর্তৃক বিল গৃহীত হয়েছে এবং রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য ওই বিল প্রেরিত হবে।
  • সরকার গঠন, তার কার্যকাল নিয়ন্ত্রণ ও অপসারণে রাজ্যসভার প্রকৃত কোনো ক্ষমতা নেই ৷ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকারকে নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা লোকসভারই রয়েছে। রাজ্যসভায় কোনো দলের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার উপর, সরকার গঠন নির্ভরশীল নয়। তবে মন্ত্রি-পরিষদ গঠনের সময় প্রধানমন্ত্রী রাজ্যসভা থেকে স্বীয় দল বা জোটের সদস্যদের মন্ত্রিসভায় গ্রহণ করেন। রাজ্যসভার কোনো সদস্যকে গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের ভারও দিতে পারেন।
  • রাজসভা এবং লোকসভার নির্বাচিত সদস্যগণই রাষ্ট্রপতি এবং উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন। উভয় কক্ষের মনোনীত সদস্যগণ উপরোক্ত দুই পদাধিকারীর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন না৷
>> ভারতের উপ রাষ্ট্রপতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
  • রাষ্ট্রপতির পদচ্যুতির জন্য রাজ্যসভা এবং লোকসভার যে কোনো কক্ষেই প্রস্তাব উত্থাপিত হতে পারে। প্রত্যেক কক্ষে উপস্থিত এবং ভোটদানকারী সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য এবং সেই সদস্যসংখ্যা প্রতিটি কক্ষের মোট সদস্যসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ হলেই রাষ্ট্রপতি পদচ্যুত হন। উপরাষ্ট্রপতির পদচ্যুতির ক্ষেত্রে প্রথমে রাজ্যসভায় প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। রাজ্যসভায় মোট সদস্যসংখ্যার সংখ্যা গরিষ্ঠের দ্বারা উপরাষ্ট্রপতির পদচ্যুতির প্রস্তাব অনুমোদিত হলে এবং লোকসভা ওই প্রস্তাব অনুমোদন করলে উপরাষ্ট্রপতি পদচ্যুত হন। সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিসহ অন্যান্য বিচারপতি, ভারতের নিয়ন্ত্রক ও মহাগণনা পরীক্ষক প্রমুখ পদাধিকারীদের পদচ্যুতির ক্ষেত্রেও রাজ্যসভা এবং লোকসভার ক্ষমতা সমান। 


Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad