মানুষের ব্যক্তি, গােষ্ঠী ও রাষ্ট্রজীবনে জল এক অপরিহার্য সামগ্রী। গৃহস্থালির কাজে, পানীয় জল হিসেবে, সেচের জন্য, কলকারখানায় উৎপাদনের কাজে, জলপরিবহনের জন্য, পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার উদ্দেশ্যে জল চাই। কিন্তু বৃষ্টিপাত,নদীনালা, জলাশয়, হ্রদ, হিমবাহগলিত জল, ভৌমজল ইত্যাদির মাধ্যমে স্বাভাবিকভাবে জলের জোগান পৃথিবীর সর্বত্র, দেশের সর্বত্র, এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে বা এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে সমান হতে পারে না। কিন্তু প্রত্যেক অঞ্চল, রাজ্য, দেশ চায় জলের অবাধ জোগানে নিঃশর্ত অধিকার।
ভারতের জলবণ্টনগত বিরােধপ্রবণ প্রধান নদীগুলি হল-
(1) কাবেরী নদী – কর্ণাটক ও তামিলনাড়ুর মধ্যে বিরােধ।
(2) মহানদী নদী – ওড়িশা ও ছত্তিশগড়-এর মধ্যে বিরােধ।
(3) কৃষ্ণা নদী – কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, তেলঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশের মধ্যে বিরােধ।
(4) মান্ডবি নদী – কর্ণাটক ও গােয়ার মধ্যে বিরােধ।
(5) বংশধারা নদী – ওড়িশা ও অন্ধ্রপ্রদেশের মধ্যে বিরােধ।
(6) ইরাবতী (রাভী) ও বিপাশা (বিয়াস) নদী – পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও রাজস্থানের মধ্যে বিরােধ।
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সীমানা নির্ধারণ ও প্রতিবেশী দেশের মধ্যে জলবণ্টনগত বিরােধ
নদী যেখানে দু'দেশের মধ্যে আন্তর্জাতিক সীমানা নির্ধারণ করে, সেখানে নদীখাতের পরিবর্তন হলে দু’দেশের সীমানা বদলে যাওয়ার সমস্যা তৈরি হয়। ফলে বিরােধ বাধে। এছাড়া আন্তর্জাতিক নদীগুলিতে বাঁধ দেওয়া, নির্মিত জলাধারে জল ধরে রাখার পরিমাণ, জলাধার থেকে জল ছাড়ার সময় ও পরিমাণ নিয়েও সংশ্লিষ্ট দেশগুলির মধ্যে বিরােধ তৈরি হয়। এ বিষয়ে উদাহরণ অনেক, যেমন-
(1) পদ্ম বা গঙ্গা এবং তিস্তা নদী – ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে মতের অমিল।
(2) সিন্ধু নদ – ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মতের অমিল।
(3) মহাকালী নদী – ভারত ও নেপালের মধ্যে মতের অমিল।
(4) আমুর নদী – চিন ও রাশিয়ার মধ্যে মতের অমিল।
(5) কলােরাডাে এবং রিও গ্র্যান্ডে নদী – আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর মধ্যে মতের অমিল।
(6) দানিয়ুব নদী – জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও স্লোভাকিয়ার মধ্যে মতের অমিল।
(7) সেনেগাল নদী – সেনেগাল ও মরিটানিয়ার মধ্যে মতের অমিল।
(8) অরেঞ্জ নদী – নামিবিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে মতের অমিল।
(9) মেকং নদী - লাওস, কম্বােডিয়া, থাইল্যান্ড ও মায়ানমারের মধ্যে মতের অমিল।
Also Read >>