স্বাধীনতা সংগ্রামীদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান ও ইতিহাস: জানুন ভারতের নায়কদের কথা।

স্বাধীনতা সংগ্রামীদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান

 📝 ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল এক দীর্ঘ ও ত্যাগের পথ, যেখানে বহু সংগ্রামী নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। এখানে আলোচনা করা হয়েছে বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কার্যকলাপ নিয়ে, যাঁরা ইতিহাসে অমর হয়ে রয়েছেন। বিনায়ক দামোদর সাভারকর ছিলেন হিন্দুত্ববাদী মতাদর্শের প্রবক্তা এবং বিপ্লবী আন্দোলনের এক অগ্রদূত। বাসুদেব বলবন্ত ফাড়কে ছিলেন ভারতের প্রথম সশস্ত্র বিপ্লবী, যিনি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছিলেন। ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ ছিলেন ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি এবং কংগ্রেসের অন্যতম নেতৃত্ব। গোপালকৃষ্ণ গোখলে ও গোপালহরি দেশমুখ ছিলেন সমাজ সংস্কারক এবং রাজনীতিক। মৌলানা আবুল কালাম আজাদ শিক্ষাক্ষেত্রে ও ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের আদর্শে ছিলেন পথপ্রদর্শক। জয়প্রকাশ নারায়ণ নেতৃত্ব দিয়েছেন সামাজিক আন্দোলনে। রাসবিহারী বসু ও যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ছিলেন সশস্ত্র বিপ্লবের প্রেরণা। বদরুদ্দিন তায়েবজি ছিলেন ভারতের প্রথম মুসলিম ব্যারিস্টার ও কংগ্রেসের প্রাথমিক যুগের নেতা। ভারতীয় ইতিহাসে তাঁদের অবদান আজও অনুপ্রেরণা। এই বিষয়টি WBCS, PSC, SSC, Rail, WBP SI, WBSSC এছাড়াও রাজ্যের অন্যান্য প্রাতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য উপযোগী।
 table of content (toc)

এখানে তাঁদের আদর্শ, সংগ্রাম ও ভারতের স্বাধীনতায় অবদানের বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হয়েছে, যা পাঠকদের ইতিহাস জানাতে এবং নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করতে সহায়ক হবে। এখানে যে সব স্বাধীনতা সংগ্রামীদের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলি আলোচনা করা হয়েছে তাঁরা হলেন-

  • বদরুদ্দিন তায়েবজি 
  • বিনায়ক দামোদর সাভারকর, 
  • বাসুদেব বলবন্ত ফাড়কে, 
  • ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ, 
  • গোপালকৃষ্ণ গোখলে, 
  • গোপালহরি দেশমুখ, 
  • মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, 
  • জয়প্রকাশ নারায়ণ, 
  • রাসবিহারী বসু, 
  • যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়

বদরুদ্দিন তায়েবজি (১৮৪৪-১৯০৬)

  • বোম্বের প্রথম ব্যারিস্টার হন।
  • বোম্বে প্রেসিডেন্সি অ্যাসোসিয়েশন ও বোম্বে লেজিসলেটিভকাউন্সিল-এর সদস্য।
  • জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম মুসলিম সভাপতি।

যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় (১৮৭৯-১৯১৫)

  • ছদ্মনাম বা উপাধি 'বাঘা যতীন'।
  • যুগান্তর দলের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন।
  • কলকাতার বিখ্যাত অস্ত্র ব্যাবসায়ী রডাকোম্পানির অস্ত্র লুণ্ঠনের। সঙ্গে জড়িত।
  • গদর পার্টির উত্তর ভারতে ব্যাপক গণআন্দোলনের পরিকল্পনা। করেন।
  • ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে উড়িষ্যার বুড়িবালামের যুদ্ধে প্রাণ হারান।

রাসবিহারী বসু (১৮৮৬-১৯৪৫)

  • বাংলার বিপ্লবী জাতীয়তাবাদী নেতা।
  • লর্ড হার্ডিঞ্জের উপর বোমা নিক্ষেপের ঘটনা লাহোর ষড়যন্ত্র মামলায় তিনি অভিযুক্ত হন। কিন্তু কোনোক্রমে জাপানে পালিয়ে যান।
  • তিনি আজাদ হিন্দ বাহিনী গঠন করেন, কিন্তু এর কার্যভার তুলে দেন সুভাষচন্দ্র বোসের হাতে।
  • ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে টোকিওতে তাঁর মৃত্যু হয়।

জয়প্রকাশ নারায়ণ (১৯০২-১৯৭৯)

  • বিহারের স্বাধীনতা সংগ্রামী, 'লোকনায়ক' নামে অধিক পরিচিত।
  • ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে সর্বভারতীয় সমাজবাদী পার্টি গড়ে তোলেন।
  • ভারত ছাড়ো আন্দোলনে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করেন।
  • বিনোবা ভাবের 'ভূদান আন্দোলন'-এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
  • ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে জনতা পার্টি গড়ে তোলেন।

মৌলানা আবুল কালাম আজাদ (১৮৮৮-১৯৫৮)

  • স্বদেশি আন্দোলনের সুময় জাতীয় কংগ্রেসে যোগদান করেন।
  • খিলাফৎ কমিটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন, দিল্লিতে কংগ্রেসের বিশেষ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন, কংগ্রেসের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য ছিলেন।
  • তিনি সিমলা বৈঠক (১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে) ও ক্যাবিনেট মিশনে (১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে) যোগদান করেন।
  • ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে সংবিধান সভার সদস্য হন এবং স্বাধীন ভারতের
  • প্রথম শিক্ষামন্ত্রী হন।
  • তাঁর লেখা গ্রন্থের নাম 'India Wins Freedom'।
  • আরবি, ইংরেজি, উর্দু, হিন্দি, পার্সি এবং বাংলায় পারদর্শী ছিলেন।
  • 'Al Hilal' নামক সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করেন।
  • ১৯৯২ সালে মরণোত্তর ভারত-রত্ন পান।
  • ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে ও ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন।
  • স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী।
  • ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে ১১ নভেম্বর মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন।
  • ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বাংলার দুই বিপ্লবী অরবিন্দ ঘোষ এবং শ্যাম সুন্দর চক্রবর্তীর সঙ্গে বৈপ্লবিক আন্দোলনে যোগদান করেন।
  • উত্তর ভারত এবং বোম্বেতে গোপনে বৈপ্লবিক কেন্দ্র স্থাপন করতে সাহায্য করেছিলেন।
  • ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে ধরসনা সত্যাগ্রহের অন্যতম প্রধান সংগঠক।
  • 1920 সালে Jamia Milia Islamia প্রতিষ্ঠাতা কমিটির সদস্য ছিলেন।

গোপালহরি দেশমুখ (১৮২৩-১৮৯২)

  • 'লোক হিতবাদী' নামে পরিচিত।
  • তিনি ছিলেন মহারাষ্ট্রের সমাজ সংস্কারক।
  • আহমেদাবাদে 'পূর্ণ বিবাহ মণ্ডল' প্রতিষ্ঠা করে, তার মাধ্যমে বিধবা বিবাহে উৎসাহ দান করেন।
  • 'জনপ্রকাশ', 'ইন্দু প্রকাশ' নামক মাসিক পত্রিকা এবং 'হিতেচ্চু' নামক সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করেন (গুজরাটি ও ইংরেজি ভাষায়)।

গোপালকৃষ্ণ গোখলে (১৮৬৬-১৯১৫)

  • গান্ধীজির রাজনৈতিক গুরু।
  • জাতীয় কংগ্রেসের বেনারস অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
  • ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে 'Servants of India Society' প্রতিষ্ঠা করেন।
  • পুনের এক স্কুলে সহকারী মাস্টার হিসেবে জীবিকা শুরু করেন।
  • The Hitavada (১৯১১) দৈনিক ইংরেজি পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা।

ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ (১৮৮৪-১৯৬৩)

  • অসহযোগ আন্দোলন, চম্পারণ সত্যাগ্রহ, ভারত ছাড় আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন।
  • পাটনায় 'National College' প্রতিষ্ঠা করেন।
  • সংবিধান সভার সভাপতিত্ব করেন।
  • স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রেসিডেন্ট।
  • ১৯৬২ সালে 'ভারতরত্ন' উপাধি লাভ করেন।
  • 'দেশ' নামক হিন্দি সাপ্তাহিক পত্রিকা সম্পাদনা করেন।

বাসুদেব বলবন্ত ফাড়কে (১৮৪৫-১৮৩৩)

  • মহারাষ্ট্রে বিপ্লবী গুপ্ত সমিতি গড়ে তোলেন।
  • বোম্বাই প্রেসিডেন্সিতে দুর্ভিক্ষের সময় ব্রিটিশ সরকারের উদাসীনতা লক্ষ করে তিনি রামোশি, ভীল, কোল, ধাঙর প্রভৃতি উপজাতীয় সম্প্রদায়ের মানুষদের নিয়ে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন গড়ে তোলেন।
  • ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে বন্দি হন ও যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর হয়।
  • রমেশচন্দ্র মজুমদার তাঁকে 'ভারতের বৈপ্লবিক জাতীয়তাবাদের জনক' বলে অভিহিত করেন।

বিনায়ক দামোদর সাভারকর (১৮৮৩-১৯৬৬)

  • ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে 'মিত্রমেলা' নামক সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন।
  • ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে 'অভিনব ভারত' নামক সংঘ স্থাপন করেন।
  • ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে লন্ডনে যান বোম্বাইয়ের বিপ্লবীদের কাছে অস্ত্র ও বোমা তৈরির নিয়মাবলি পাঠাতে।
  • তাঁর প্রেরিত অস্ত্রের সাহায্যেই ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে অনন্ত লক্ষণ কানহেরী নাসিকের জেলাশাসক জ্যাকসনকে হত্যা করেন।
  • নাসিক ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার হন।
  • 'বীর সাভারকার' উপাধি পান।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.