যে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় ক্লোরোফিলযুক্ত কোষে সূর্যালোকের উপস্থিতিতে এবং ক্লোরোফিলের সাহায্যে পরিবেশ থেকে শোষিত জল ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে সরল শর্করা (গ্লুকোজ) সংশ্লেষিত হয় এবং উৎপন্ন খাদ্যে সৌর শক্তির আবদ্ধকরণ ঘটে এবং উপজাত বস্তুরূপে জল ও অক্সিজেন উৎপন্ন হয়, তাকে ফটোসিন্থেসিস বা সালোকসংশ্লেষ বলে।
বেনসন, কেলভিন, রুবেন প্রমুখ বিজ্ঞানীরা সালোকসংশ্লেষের নির্ভুল রাসায়নিক সমীকরণ উল্লেখ করেছেন। নিম্নে তা হল:
6CO2 +12H2O ক্লোরোফিল/সূর্যালোক→C6H12O6+6H2O +6O2
এই সমীকরণটি থেকে নিম্নলিখিত তথ্যগুলি পাওয়া যায়-
- (i) 6 অণু কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং 12 অণু জলের সমন্বয়ে উৎপন্ন হয় 1 অণু গ্লুকোজ, 6 অণু জল এবং 6 অণু অক্সিজেন।
- (ii) সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় গৃহীত কার্বন ডাই-অক্সাইডের সম-অণু অক্সিজেন উৎপন্ন হয় (উভয় ক্ষেত্রেই 6 অণু)।
- (iii) প্রতি গ্রাম-অণু গ্লুকোজে 686 Kcal শক্তি স্থৈতিক শক্তিরূপে আবদ্ধ হয়।
- (iv) সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় উপজাত পদার্থরূপে উৎপন্ন অক্সিজেনের উৎস হল জল।
- (v) সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন জল (যাকে বিপাকীয় জল বলা হয়) পুনরায় দেহকোষগুলির মধ্যে শোষিত হয়, যা উদ্ভিদ তার বিভিন্ন বিপাকীয় কাজের জন্য ব্যবহার করে।
- (vi) সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন অক্সিজেন পত্ররন্ধ্র দিয়ে দেহের বাইরে নির্গত হয়।
এই রাসায়নিক সমীকরণটি থেকে সালোকসংশ্লেষের প্রধান তাৎপর্যগুলি লক্ষ করা যায়, সেগুলি হল:
- (a) সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন গ্লুকোজ বা দ্রাক্ষা-শর্করা প্রধানত উদ্ভিদের বিভিন্ন অঙ্গে (মূল, কাণ্ড, পাতা, ফল, বীজ ইত্যাদি) শ্বেতসাররূপে সঞ্চিত থাকে (তাছাড়া প্রোটিন ও স্নেহপদার্থরূপেও সঞ্চিত থাকে, যেমন: বিভিন্ন ডালে প্রোটিন এবং বাদাম, নারকেল ইত্যাদিতে তেলরূপে); উদ্ভিদ অঙ্গে সঞ্চিত ওই খাদ্য জীবজগতের প্রাথমিক খাদ্যরূপে ব্যবহৃত হয় অর্থাৎ জীবজগতের প্রাথমিক খাদ্যের উৎস হল সালোকসংশ্লেষ।
- (b) সালোকসংশ্লেষের ফলে উৎপন্ন অক্সিজেন জীবকূলের শ্বসনের জন্য ব্যবহৃত হয় অর্থাৎ বায়ুমণ্ডলের অক্সিজেনের উৎস হল সালোকসংশ্লেষ।
- (c) প্রাণীদের শক্তির উৎস হল খাদ্য। সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় প্রস্তুত খাদ্যের মধ্যে সৌরশক্তি থেকে প্রাপ্ত শক্তি আবদ্ধ হয়। সুতরাং শক্তির উৎস হল সালোকসংশ্লেষ।
