রামকৃষ্ণ মিশন
ভূমিকা
- ১৮৯৭ সালের ১ মে স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর সতীর্থদের সহযোগিতায় গুরু রামকৃষ্ণদেবের নামে রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। ভারতীয় জাতির প্রাণে নবপ্রেরণার জোয়ার এনে জাতিধর্মবর্ণনির্বিশেষে ঈশ্বরজ্ঞানে বিশ্ব-মানবসেবার আদর্শ স্থাপন করেছে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন।
প্রতিষ্ঠার ইতিহাস
- ১৮৮৬ সালে শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণদেবের দেহত্যাগের পর কলকাতার বলরাম বসুর বাসভবনে রামকৃষ্ণদেবের ভক্তদের নিয়ে স্বামী বিবেকানন্দ এক অধিবেশনে রামকৃষ্ণ মিশন অ্যাসোসিয়েশন গঠনের প্রস্তাব রাখেন।
- স্বামী বিবেকানন্দ নিজের হাতে মিশন গঠনের প্রস্তাব ও নিয়মাবলির খসড়া তৈরি করেন।
- ১৯০৯ সালের ৪ মে ব্রিটিশ সরকারের দপ্তরে আনুষ্ঠানিকভাবে রামকৃষ্ণ মিশন নথিভুক্ত হয়। এই মিশনের প্রধান কেন্দ্র গড়ে তোলা হয় হাওড়ার গঙ্গা তীরে বেলুড়ে, যা বর্তমানে বেলুড় মঠ নামে পরিচিত।
- স্বামী ব্রহ্মানন্দ রামকৃষ্ণ মিশনের প্রথম প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ১৮৯৯ সালের ১৪ জানুয়ারি থেকে স্বামী ত্রিগুণাতীতানন্দের প্রচেষ্টায় রামকৃষ্ণ মিশনের বাংলা মুখপাত্র 'উদ্বোধন' পত্রিকা প্রকাশিত হতে থাকে।
উদ্দেশ্য
- হিন্দুধর্ম ও ঐতিহ্যের আদলে স্থাপিত হলেও এর মধ্যে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মিলন ঘটেছে। ঈশ্বরে বিশ্বাস ও জাতিধর্মবর্ণনির্বিশেষে মানবসেবা ও মানুষ তৈরির আদর্শ নিয়ে এই মিশন প্রতিষ্ঠা করা হলেও এর উদ্দেশ্য ছিল-
- (১) দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় শাশ্বত সনাতন বৈদান্তিক আদর্শ ছড়িয়ে দেওয়া।
- (২) বিভিন্ন ধর্মীয় ভেদাভেদ ও সাম্প্রদায়িক অনৈক্যের বাধা দূর করে সকলকেই মহৎ আদর্শে অনুপ্রাণিত করা।
- (৩) জাতিধর্মবর্ণনির্বিশেষে দুঃস্থ মানুষের সেবা করা।
বৈশিষ্ট্য
রামকৃষ্ণ মিশনে বেদান্তের আদর্শ ও মূর্তি পূজা স্বীকৃতি পেয়েছে। এই মিশনের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল-
- (১) সব ধর্মে শ্রদ্ধা সব ধর্মের প্রতি সমান শ্রদ্ধা জানানো।
- (২) ধর্মীয় সংকীর্ণতা মুক্ত রামকৃষ্ণ মিশন সকল ধর্মীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে সমাজসেবার পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ কবলিত মানুষের পাশে দাঁড়ায়।
- (৩) জাঁতির সেবা: রামকৃষ্ণ মিশন কোনো গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। সকল গোষ্ঠীর উর্ধ্বে সমগ্র মানব জাতির সেবায় নিয়োজিত রয়েছে রামকৃষ্ণ মিশন।
প্রসার
- ভারত ছাড়া ভারতের বাইরেও ভারতীয় ধর্ম ও সংস্কৃতি বিস্তারের উদ্দেশ্যে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের শতাধিক শাখা স্থাপিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর রামকৃষ্ণ মিশনের অধীনে যেসব সেবাকেন্দ্র ছিল সেগুলি হল-
- (১) বেনারসের দ্য রামকৃষ্ণ মিশন হোম অব সার্ভিস।
- (২) কনখলের দা রামকৃষ্ণ মিশন সেবাশ্রম।
- (৩) বৃন্দাবনের দ্য রামকৃষ্ণ মিশন সেবাশ্রম।
- (৪) এলাহাবাদের দ্য রামকৃষ্ণ মিশন। বর্তমানে রামকৃষ্ণ মিশনের বিভিন্ন শাখা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, রাশিয়া, সুইৎজারল্যান্ড, কানাডা, আর্জেন্টিনা, শ্রীলঙ্কা, নেদারল্যান্ডস-সহ বিভিন্ন দেশে রয়েছে।