সন্ধান বা ফারমেনটেশন
- যে শ্বসন পদ্ধতিতে শ্বসন বস্তু (গ্লুকোজ) অক্সিজেন ছাড়াই আংশিকভাবে জারিত হয়ে বিভিন্ন জৈব যৌগ সৃষ্টি করে এবং শ্বসন বস্তুস্থিত শক্তির আংশিক নির্গমন ঘটে, তাকে সন্ধান বা ফারমেনটেশন বলে।
সন্ধান বা ফারমেনটেশনের স্থান:
- সাধারণত সরল শর্করার (গ্লুকোজ, সুক্রোজ প্রভৃতি) দ্রবণে সন্ধান প্রক্রিয়াটি ঘটে। ঈস্ট (এক ধরনের ছত্রাক), ল্যাকটো-ব্যাসিলাস (এক ধরনের ব্যাকটেরিয়াম) ইত্যাদি নিম্নশ্রেণির জীবের দ্বারা এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়।
সন্ধানের প্রকারভেদ:
- বিভিন্ন ধরনের জীবাণু ও ছত্রাক বিভিন্ন রকম সন্ধান ঘটায়। সন্ধান প্রধানত দু'রকমের হয়, যথা কোহল সন্ধান এবং ল্যাকটিক অ্যাসিড সন্ধান।
কোহল সন্ধান:
- কোহল সন্ধানে গ্লুকোজের দ্রবণ ঈস্টের সাহায্যে বিশ্লিষ্ট হয়ে ইথাইল অ্যালকোহল ও কার্বন ডাই-অক্সাইডে পরিণত হয় এবং অল্প পরিমাণ তাপশক্তি উৎপন্ন হয়।
- খেজুর ও তালের রসের গ্লুকোজ ঈস্টের উপস্থিতিতে সন্ধান প্রক্রিয়ায় ইথাইল অ্যালকোহল ও কার্বন ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন করে এবং দ্রবণটি গেঁজে উঠে।
- খেজুর রস ও তাল রস থেকে সন্ধান প্রক্রিয়ায় দেশি মদ বা তাড়ি উৎপন্ন হয়। কোহল সন্ধানের রাসায়নিক সমীকরণ হল:
C6H12O6→উৎসেচক →2CH3COCOOH→ 2C2H5OH +2CO2+50 Kcal
ল্যাকটিক অ্যাসিড সন্ধান:
- ল্যাকটিক অ্যাসিড সন্ধানে দুগ্ধ শর্করা বা ল্যাকটোজ ল্যাকেটোব্যাসিলাস ব্যাকটিরিয়ামের সাহায্যে বিশ্লিষ্ট হয়ে ল্যাকটিক অ্যাসিডে পরিণত হয়। এর ফলে দুধ দই-এ রূপান্তরিত হয়।
- অতিরিক্ত পরিশ্রমের সময় পেশিতে অক্সিজেনের অভাব ঘটলে পেশি কোষে ল্যাকটিক অ্যাসিড সন্ধান ঘটে। পেশি কোষে ল্যাকটিক অ্যাসিড সঞ্চিত হলে পেশির ক্লান্তি ঘটে। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলে কোষ থেকে ল্যাকটিক অ্যাসিড দূরীভূত হয়ে পেশি পুনরায় সচল হয়। ল্যাকটিক অ্যাসিড সন্ধানে CO2 উৎপন্ন হয় না। ল্যাকটিক অ্যাসিড সন্ধানের রাসায়নিক সমীকরণ হল:
C6H12O6→উৎসেচক →2CH3COCOOH→ 2CH3CH(OH)COOH +36 Kcal
সন্ধানের অর্থনৈতিক গুরুত্ব:
- পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে অ্যালকোহল,, সুরা, ল্যাকটিক অ্যাসিড, ভিনিগার, দই ও অন্যান্য খাদ্যবস্তু উৎপাদনে এবং বিভিন্ন শিল্পে রাসায়নিক বস্তু উৎপাদনে সন্ধানের অপরিসীম গুরুত্ব রয়েছে।