অপিনিহিতি :-
'অপি' শব্দের অর্থ 'পূর্বে' এবং 'নিহিতি' শব্দের অর্থ স্থাপন। অপিনিহিতি শব্দের অর্থ পূর্বে অবস্থান ধ্বনি পরিবর্তনের এই পরিবেশে নাম দিয়েছেন ডঃ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়
শব্দের মধ্যে ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত 'ই' বা 'উ' কার উচ্চারণের সময় স্ব স্থানে উচ্চারিত না হয়ে যে ব্যঞ্জন এর সাথে যুক্ত তার অব্যবহিত পূর্বে উচ্চারিত হয় তাকে অপিনিহিতি বলে।
উদাহরণ :-
আজি > আইজ,
রাখিয়া > রাঈখ্যা,
শুনিয়া >শুইন্যা,
করিয়া >কইর্যা,
চারি > চাইর,
সাধু >সাউধ
ব্যঞ্জনসংগতি বা সমীভবন :-
একই শব্দের মধ্যে বিভিন্ন ব্যঞ্জনধ্বনির যুক্ত পাশাপাশি থাকলে উচ্চারণের সুবিধার জন্য ধ্বনি দুটিকে একই ধ্বনিতে, কখনও বা একই বর্গের ধ্বনিতে রূপান্তরিত করার নাম ব্যঞ্জনসংগতি বা সমীভবন।
ব্যঞ্জনসংগতি বা সমীভবন তিন প্রকারের ---
১) প্রগত সমীভবন :-- পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনধ্বনির প্রভাবে পরবর্তী ব্যঞ্জনধ্বনি পরিবর্তিত হয়ে পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনধ্বনির সমতা পেলে তাকে প্রগত সমীভবন বলে।
উদাহরণ :-- পদ্ম >পদ্দ, চন্দন > চন্নন, পকব > পক্ক, চক্র >চক্ক ইত্যাদি।
২) পরাগত সমীভবন :-- পরবর্তী ব্যঞ্জনধ্বনির প্রভাবে পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনধ্বনি পরিবর্তন হয়ে পরবর্তী ব্যঞ্জনধ্বনির সমতা পেলে তাকে পরাগত সমীভবন বলে।
উদাহরণ :-- তর্ক >তক্ক, গল্প> গপ্প, সর্প >সপ্প, ধর্ম >ধমম ইত্যাদি।
৩) অন্যোন্য সমীভবন :-- পরবর্তী ও পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনধ্বনি উভয়েই যখন উভয়ের প্রভাবে পরিবর্তিত হয় তখন তাকে অন্যোন্য সমীভবন বলে।
উদাহরণ :-- অদ্য >অজ্জ, উৎশ্বাস >উৎচ্ছাস
বিষমীভবন :--
শব্দের মধ্যে অবস্থিত দুটি সমধ্বনির একটি পরিবর্তিন ঘটলে তাকে বিষমীভবন বলে।
উদাহরণ :-- লাল >নাল, ললাট >নলাট, শরীর > শরীল
নাসিক্যীভবন : -
নাসিক্যীব্যঞ্জন ( ঙ,ঞ,ন,ণ,ম) লোপ পাওয়ার ফলে পূর্ব স্বরধবনিটি অনুনাসিক হয় তাকে নাসিক্যীভবন বলে।
উদাহরণ :- চন্দ্র >চাঁদ, শঙখ >শাঁখ, পঞ্চ >পাঁচ, অঙ্ক>আঁক
স্বতোনাসিক্যীভবন :--
নাসিক্যীব্যঞ্জন লোপ না পেয়েও যদি সানুনাসিক স্বর হয় তাকে স্বতোনাসিক্যীভবন বলে।
উদাহরণ :--
পুস্তক > পুথি > পুঁথি,
হাসপাতাল > হাঁসপাতাল।